ফাইল চিত্র।
বছর দুয়েক আগেও তাঁতযন্ত্রের খটাখট শব্দে পাড়ায় কান পাতার যেত না। লকডাউনের জেরে সেই শব্দই এখন ক্ষীণ হয়ে এসেছে। জীবিকা হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়েছেন বহু তাঁতি। তাঁত ছেড়ে দিনমজুরি করেছেন অনেকে। অথচ একসময় তাঁত ছেড়ে দম ফেলার ফুরসত পেতেন সাঁইথিয়ার ওই তাঁতিরা।
সাঁইথিয়ার মুড়াডিহি, বোলসুন্ডা এবং ভালদহ কলোনিতে প্রায় সহস্রাধিক তন্তুবায় পরিবারের বাস। তাদের একমাত্র জীবিকা তাঁত বোনা। বর্তমানে লকডাউনের জেরে জীবিকা হারিয়ে অধিকাংশই বিপন্ন হয়ে পড়েছেন। তিনটি কলোনিতে দু’ধরনের তাঁতি রয়েছেন। তাঁদের অনেকে নিজেরাই কাঁচা মাল কিনে শাড়ি, গামছা সহ অন্য পোশাক তৈরি করে মহাজনের কাছে বা বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা খুবই কম। অধিকাংশই মহাজনের কাছে সুতো-সহ অন্য কাঁচামাল নিয়ে বরাত মাফিক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শাড়ি বুনে দেন।
তাঁতিরা জানান, শাড়ির মান অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক মেলে। পারিশ্রমিকের টাকা অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে সব মেলে না। খোরাকি বাবদ শাড়ি পিছু ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দেওয়া হয়। পুজোর আগে বা পরে হিসেব করে বাকি টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়। সেই টাকাতেই তাঁদের সারা বছরের ভাত কাপড়ের সংস্থান হয়। কিন্তু লকডাউনের জেরে সেই সংস্থানও হাতছাড়া হয়েছে। উজ্বল বসাক, সন্তোষ বসাকরা তিন পুরুষ ধরে তাঁতের কাজ করছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘এতদিন সারা বছর কাজের শেষে হিসেবনিকেশ করে মহাজনের থেকে আমরা ২০-২৫ হাজার টাকা করে পেয়েছি। তাতেই আমাদের ভাত কাপড়ের সংস্থান হয়েছে। কিন্তু গতবার লকডাউনের জেরে কানাকড়িও পাইনি। তাই চরম অনটনের মধ্যে দিন কাটছে।’’
গত লকডাউনের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আরও অসহায় করে দিয়েছে তাঁতিদের। কারণ সাঁইথিয়ার উৎপাদিত শাড়ির সিংহভাগই কলকাতার বড়বাজারে রপ্তানি হয়। কিন্তু বিধিনিষেধের জেরে যানচলাচল বন্ধ থাকার পাশাপাশি আংশিক সময়ের জন্য দোকান খোলা থাকায় উৎপাদিত পণ্য রফতানি করতে পারছেন না স্থানীয় মহাজনেরা। এর ফলে অনেক মহাজন হাতগুটিয়ে নিয়েছেন। তাঁতিদের কাছে থেকে মাল নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। কেউ বা অল্প সংখ্যক তাঁতির কাছে মাল নিচ্ছেন। এর ফলে কাজ হারিয়ে ওই তাঁতিরা দিনমজুরি করছেন।
তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এলাকায় ১৪-১৫ জন মহাজন রয়েছেন। তাঁদের অধীনে গড়ে ৮০-১০০ জন করে কাজ করেন। কিন্তু এখন ১০ জন মহাজন কাজ করাচ্ছেন না। অমূল্য বসাক, নির্মল বসাকদের মতো তাঁতিরা বলেন, ‘‘কাজ হারিয়ে আমরা এখন দিনমজুরি করছি। তাও সবসময় কাজ মিলছে না।’’ মহাজন গোবিন্দ বসাক, বিকাশ বসাকেরা বলেন, ‘‘এমনিতেই যানবাহন বন্ধ। তার উপরে স্বল্প সময়ের জন্য বড়বাজার খোলা থাকছে। ওই সময়ের মধ্যে লেনদেন সম্ভব নয়। তাই মাল রফতানি করতে না পারায় আমরাও তাঁতিদের আগের মতো কাজ দিতে পারছি না।’’