প্রতীকী ছবি।
কাজের জন্য ভিন রাজ্যে ছিলেন তাঁরা। করোনা পরিস্থিতিতে সকলকে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল। নিজের জেলাতে ফিরেও থাকতে হয়েছে নিভৃতবাসে। সেখানে করোনা পরীক্ষার পরে রিপোর্ট পজ়িটিভ আসায় উদ্বেগ আরও বাড়ে। পরে সুস্থ হলেও কী কাজ করবেন, কী ভাবেই বা দিন চলবে সেই ভেবেই হয়রান হচ্ছিলেন তাঁরা। জেলা প্রশাসনের করোনা যোদ্ধা ক্লাব তাঁদের কাজের দিশা দেখিয়েছে।
সদস্য হয়েছিল মুরারই ১ ব্লকের তোহিদূর ইসলাম, ছোটন মাল এবং জামিরুল সেখ। তাঁরা এখন কোভিড হাসপাতালে কর্মরত। তাঁদের মধ্যে তোহিদূর স্বাধীনতা দিবসের দিন করোনা যোদ্ধা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সম্মান পেয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা প্রদান ও তাঁদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য ‘করোনা যোদ্ধা ক্লাব’ গঠন করা হয়েছিল। বিডিও (মুরারই ১) নিশীথভাস্কর পাল বলেন, ‘‘এই ব্লক থেকে ছ'জন করোনা জয়ী কোভিড যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে চার জন কলকাতায় ও দু’জন এই জেলায় কাজ করছেন। এঁদের মধ্যে একজনকে কোভিড যোদ্ধা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী সম্মানিত করেছেন। এটা আমাদের কাছে সত্যিই গর্বের।’’
মুরারই ১ ব্লকের মোহুড়াপুরের বাসিন্দা তোহিদূর চেন্নাইয়ের একটি কোম্পানিতে সুপার ভাইজার হিসাবে কাজ করতেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে মাস তিনেক আগে তাঁকে তড়িঘড়ি জেলায় ফিরতে হয়েছিল। জেলা ফিরে প্রায় সাতদিন ছিলেন নিভৃতবাসে। তারপরে কোভিড হাসপাতালে। কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন বটে। তবে তাঁর আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কোভিড যোদ্ধা ক্লাবের সুবাদে এই মাস থেকে তিনি কলকাতার একটি কোভিড হাসপাতালে কাজে যোগদান করেছেন। প্রতি মাসে ১৫০০০ টাকার বিনিময়ে দুমাসের চুক্তিতে এই কাজে যোগদান করেন। তাঁর কাজ কোভিড আক্রান্তদের দেখভাল করা এবং আক্রান্তদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা। তোহিদূরের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাধীনতা দিবসের দিন কোভিড যোদ্ধা হিসাবে সংবর্ধিত করেছেন। এটা আমার কাছে সত্যিই খুব গর্বের।’’
তোহিদূরের মত মুরারই ১ ব্লকের ছোটন মাল ও জামিরুল শেখও এখন কোভিড রোগীদের সহায়তায় নিযোজিত। ছোটন মুম্বইয়ে ও জামিরুল তামিলনাড়ুতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। করোনা সংক্রমণের জন্য তাঁরা কাজ ছেড়ে জেলায়। সেখানেও তাঁদের প্রথমে নিভৃতবাস এবং পরে কোভিড হাসপাতালে যেতে হয়। তারপর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর তাঁদের কাছে দুশ্চিন্তা ছিল যে কী কাজ করবেন। তারপরেই তাঁরা করোনা হাসপাতালে কাজ করার সুযোগ পান। তাঁরাও কাজে যোগদান করেন। ছোটন মহম্মদবাজার থানা এলাকায় একটি সরকারি সেফ হোমে ও জামিরুল কলকাতার একটি করোনা হাসপাতালে কর্মরত। তাঁদেরও কাজ করোনা রোগীদের দেখভাল করা। ছোটনের কথায়, ‘‘আগে যা রোজগার করতাম তার থেকে কিছু কম টাকা পাব ঠিকই। কিন্তু নিজের জেলায় বা নিজের রাজ্যে থেকে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি এটাই অনেক। তাছাড়া করোনা সংক্রমণের কারণে আমাদের কাজ একদমই বন্ধ। তাই রোজগার ছিল না। সেই মুহূর্তে এই কাজ আমার কাছে বড় পাওনা।’’ একই কথা বলেছেন জামিরুল।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)