নির্বাচন ঘোষণার পরের দিনই তৃণমূলের বান্দোয়ান পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়া পোস্টার পড়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
বেশ কয়েক বছর আগে বান্দোয়ানের মতো এলাকায় মাওবাদীদের নামে এ ভাবেই তৎকালীন শাসকদল সিপিএম নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে পোস্টার পড়ত। তাই রবিবার সকালে ফের পোস্টার দেখে বান্দোয়ানে জোর চর্চা শুরু হয়ে যায়।
যদিও পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘এগুলি মাওবাদীদের লেখা পোস্টার নয়। কে বা কারা কী উদ্দেশে এই পোস্টার সাঁটাল, আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’’ বিরোধীরা অবশ্য এই ঘটনায় শাসকদলের দ্বন্দ্বের দিকেই ইঙ্গিত করেছে।
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বান্দোয়ান পঞ্চায়েতের উপপ্রধান লেপারাম সোরেন তাঁদের কাছে সাদামাটা বলেই পরিচিত। তাই এ দিন ভোরে লেপারামবাবুর বাড়ি উদলবনি থেকে পাশের মৃগীচামি, মহুলবনি প্রভৃতি জায়গার বাসিন্দারা ঘুম থেকে উঠে গাছে, লোকের বাড়ির দেওয়ালে, স্কুলের পাঁচিলে তাঁকে হুঁশিয়ারি দেওয়া লাল কালিতে হাতে লেখা পোস্টার দেখে তাজ্জব হয়ে যান।
শুধু তাঁকেই নয়, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নামেও হুঁশিয়ারি দেওয়া রয়েছে পোস্টারে। খবর পেয়ে সকালেই পুলিশ পোস্টারগুলি খুলে নিয়ে যায়।
কারা, কী উদ্দেশে পোস্টার দিল— তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। লেপারামবাবুর দাবি, ‘‘আমার সঙ্গে কারও বিরোধ নেই। তা হলে কে পোস্টার দিল?’’
যুব তৃণমূলের বান্দোয়ান ব্লক সভাপতি জগদীশ মাহাতোর বিস্ময়, ‘‘কয়েক মাস আগে আমি ডাকযোগে হুমকি-চিঠি পেয়েছিলাম। কিন্তু লেপারাম তো তেমন বড় নেতা নন!’’
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি রঘুনাথ মাঝির কথায়, ‘‘নিরীহ লেপারামকে কারা হুঁশিয়ারি দিল, কেনই বা দিল, বুঝতে পারছি না।’’ তাঁর আশঙ্কা, তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটি জোট হচ্ছে, চমক দেওয়ার জন্য তারা এই কাজ করেনি তো?
বান্দোয়ানে অশান্তির সময় মাওবাদীদের প্রতিরোধ করতে গ্রাম রক্ষী বাহিনী গড়া হয়েছিল। বর্তমানে সিপিএমের বান্দোয়ান এরিয়া কমিটির সম্পাদক রথু সিংহ তার নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘উহুঁ, এই কাজ মাওবাদীদের নয়। পোস্টার সাঁটানোর পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ থাকতে পারে।’’
বান্দোয়ানে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব কম দিনের নয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, লেপারাম বিরুদ্ধ গোষ্ঠীতে থাকলেও ইদানীং ব্লকের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন।
রাজনীতি সচেতনদের প্রশ্ন, পোস্টার-কাণ্ডের পিছনে গোষ্ঠী বদল কারণ নয় তো? যদিও বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা কলেন্দ্রনাথ মান্ডি, বীরেন্দ্রনাথ মাহাতোরা লেপারামকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ।
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তারা হাল ছাড়ছেন না। নির্বাচনের মুখে কোনওরকম আতঙ্ক ছড়াতে তাঁরা দেবেন না। পোস্টার-কাণ্ডে যুক্তদের খুঁজতে তারা নেমে পড়েছে।