মুজফফর আহমেদ ভবনে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র।
উপনির্বাচন ঘিরে বিরাট কোনও প্রত্যাশা ছিল না। কিন্তু সেই ভোটে ফের ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে প্রশ্ন উঠল সিপিএমে। দলের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মোকাবিলায় বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে এগোনোই সিপিএমের লক্ষ্য। আবার নির্বাচনের পাশাপাশি আন্দোলনের জন্য বৃহত্তর বাম ঐক্য প্রয়োজন। সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সঙ্গে সমঝোতাকে সেই দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখতে হবে, কেবল একটি নির্বাচনের ফল দিয়ে বিচার করলে চলবে না।
রাজ্যে পাঁচ জেলার ৬ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছে বুধবার। সেই উপনির্বাচনে শুধু বাঁকুড়ার তালড্যাংরা আসনে নিজেদের প্রতীকে লড়েছে সিপিএম। বামফ্রন্টের তিন শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি এবং সিপিআই লড়েছে সিতাই, মাদারিহাট ও মেদিনীপুর আসনে। উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া আসনে আইএসএফ এবং নৈহাটিতে লিবারেশনকে সমর্থন করেছে বামফ্রন্ট। আসন সমঝোতার এই সিদ্ধান্তের পরে বৃহস্পতিবারই ছিল সিপিএমের রাজ্য কমিটির প্রথম বৈঠক। সূত্রের খবর, বৈঠকে দলের একাংশ প্রশ্ন তুলেছে, লোকসভা ভোটে সিপিএমের কোনও প্রস্তাবই আইএসএফ মানেনি। ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে নওসাদ সিদ্দিকী নিজে প্রার্থী হবেন বলে সকলকে অপেক্ষায় রেখেও দাঁড়াননি। এমনকি, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকেও তারা আক্রমণ করেছিল। তার পরেও উপনির্বাচনে তাদের আসন ছাড়া হল কেন? সিপিএম নেতৃত্বের তরফে পলিটব্যুরোর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র ও রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। রাজ্যের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তাঁরা বলেছেন, ‘বৃহত্তর লক্ষ্যে’ই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী রাজনীতিতে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়ে থাকলেও সেটা সব সময় শেষ কথা হয় না। একই ভাবে লিবারেশনের সঙ্গে সমঝোতাও যে বৃহত্তর বাম ঐক্য এবং আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে য়াওয়ার স্বার্থে, সেই বার্তাও দিয়েছেন তাঁরা। তবে উপনির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনায় দুই আসনেই সিপিএমের প্রার্থী না-থাকায় দলের নিচু তলায় যে এক ধরনের ‘নিরুৎসাহ’ কাজ করেছে, তা-ও দলীয় নেতৃত্বের নজর এড়ায়নি।
উপনির্বাচন নিয়ে এ দিন রাজ্য কমিটিতে প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছেন সিপিএমের সংশ্লিষ্ট জেলা নেতৃত্ব। তালড্যাংরা এবং বিতর্ক সত্ত্বেও হাড়োয়ায় বাম ভোট কিছু বাড়বে বলে দলীয় নেতৃত্ব আশাবাদী। সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের সিতাই ও মাদারিহাট নিয়ে রিপোর্ট একেবারেই ‘নেতিবাচক’। ভয়-ভীতির পরিবেশ, এজেন্টদের বার করে দেওয়া-সহ নানা অভিযোগই আলোচনায় এসেছে।
নিজেদের ৬-০ জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী শাসক দল তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ অবশ্য কটাক্ষ করেছেন, ‘‘উপনির্বাচনে জিতব বলার মুরোদ ওদের নেই, জানি। কিন্তু সিপিএমের কি এমন এক জনও নেই যে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে বলবে, অন্তত দ্বিতীয় হব? ওরা কি তৃতীয় বা চতুর্থে নিশ্চিত?’’ অন্য দিকে, নন্দীগ্রামে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘এই সরকার যেখানেই ভোট করে, সেখানেই লুট করে। ওদের ‘স্পেশ্যাল ক্যাটিগরি’র এক ধরনের লোক আছে, তাদেরকে দিয়ে লুট করে। ... কোথাও জানলা খুলে রাখে। আমরা ছাড়া বাকি বিরোধী দলেরা এজেন্ট দেয় না কিংবা ‘সেটিং’ করে! যদি কোনও এজেন্ট থাকে, হাড়োয়ার মতো টেনে বার করে দেওয়া হয়।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলের রাজত্বে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিদিন লুট হওয়াই দস্তুর। কোথায় বিজেপি, বিরোধী তো বামেরাই! প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, নির্বাচন, মানুষের স্বার্থে যে কোনও আন্দোলনেই সেটা স্পষ্ট।’’