ঘটনার তদন্ত করছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। —ছবি : সংগৃহীত
পেরিয়ে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি। এক জন বাদে জগদ্দলের তৃণমূল নেতা অশোক সাউ খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঠিক কী কারণে খুন, তা-ও স্পষ্ট হয়নি। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের উপ-নগরপাল (উত্তর) তথা গোয়েন্দা প্রধান গণেশ বিশ্বাসের নেতৃত্বে ‘সিট’ গঠন করা হয়েছে। রাজনৈতিক আকচাআকচিও শুরু হয়েছে। খুনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ এবং জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম— দু’জনেই।
বুধবার সকালে জগদ্দল থানার অদূরে ঘোষপাড়া রোডের ধারে একটি চায়ের দোকানে গুলি করে খুন করা হয় অশোককে। বোমাবাজিও চলে। বোমায় জখম হন এক নাবালিকা-সহ ছ’জন। রাতেই কাইসার আলি ওরফে মোহন নামে স্থানীয় এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুর আদালতে পেশ করা হলে তার দশ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়।
কেন খুন হলেন অশোক? সরাসরি উত্তর এড়ালেও তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, পুরনো শত্রুতাই দায়ী। গোয়েন্দা প্রধান গণেশ বলেন, “মোহনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি হামলাকারীদের খোঁজ চলছে। আরও কিছু তথ্য আমরা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করছি না।” এ দিন আদালতে যাওয়ার পথে মোহনের দাবি, “ঘটনার সময় আমি অনেক দূরে ছিলাম। তার প্রমাণ সাতটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আছে। পুলিশ আমাকে ফাঁসাচ্ছে।”
ঘটনার রাতেই নিহতের ভাই প্রদীপ দাবি করেছিলেন, এই খুনে সুজল যাদব নামে স্থানীয় এক যুবকের হাত থাকতে পারে। সুজলের নাম এসেছিল নগরপাল অলোক রাজোরিয়ার বক্তব্যেও। কারণ, সুজলের ভাই আকাশের খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল নিহত অশোকের বিরুদ্ধে। সুজলের খোঁজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
অশোক খুনে পঙ্কজ ওরফে ইমরান নামে জগদ্দলের এক দুষ্কৃতীও জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। পঙ্কজ গত নভেম্বরে এখানে তৃণমূল কর্মী ভিকি যাদব খুনে অন্যতম অভিযুক্ত। সম্প্রতি জামিন পায়। সোমনাথের দাবি, “সুজল আর পঙ্কজের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। অশোকের উপরে পঙ্কজের আক্রোশও ছিল। অর্জুন সিংহ যখন তৃণমূলে ছিলেন, ওঁর সঙ্গে ভাল যোগাযোগ ছিল পঙ্কজের।” বৃহস্পতিবার রাতে অর্জুন এক্স হ্যান্ডলে একটি ভিডিয়ো আপলোড করেছেন, যেখানে পঙ্কজের জন্মদিন পালিত হচ্ছে কেক কেটে। উপস্থিত সোমনাথকে কেক খাইয়ে দিচ্ছে পঙ্কজ। সোমনাথ বলেন, “পঙ্কজকে মূল স্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করেছিলাম পুরসভায় কাজের সংস্থান করে। ওর সঙ্গী মুকুল ওরফে শেখ সালাহউদ্দিনকে খুন করল অর্জুনের সঙ্গে মিলে গিয়ে। অর্জুন এদের পরিচালিত করছেন। আর এখন ভুল বার্তা দিয়ে নিজে সাধু সাজছেন!”
এ দিনই অর্জুনের বাড়ির অদূরে একটি মদের আসরে গুলি চলে। কেউ হতাহত হননি। তবে অর্জুনের অভিযোগ, সন্ধ্যায় ভাটপাড়া পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের অকল্যান্ড সাইডিং-এ বয়স্ক দুগ্ধ ব্যবসায়ী রাজ বল্লভ রাইকে মেরে কপাল ফাটিয়ে দিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। তিন থেকে পাঁচ রাউন্ড গুলিও চালানো হয়েছে। সাংসদ পার্থ ভৌমিকের দাবি, “পুলিশ প্রশাসন মানুষের পাশে আছে। বিজেপির অহেতুক ভয় পাওয়ার দরকার নেই।”