বিদ্যুৎ ‘লিক’ করছে কি না তা পরীক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যু শ্রমিকদের। প্রতীকী চিত্র।
বিদ্যুৎ ‘লিক’ করছে কি না তা পরীক্ষা করতে গিয়ে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটিতে ডিভিসি-র মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিস্ফোরণে ঝলসে গেলেন চার ঠিকা শ্রমিক। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রের খবর, আহতেরা হলেন মেদিনীপুরের প্রদীপ সামন্ত, মেজিয়ার অভিনাগ পাল ও কমলেশ তিওয়ারি এবং দুর্গাপুরের বরুণ সান্যাল। প্রথমে তাঁদের বিদ্যুৎকেন্দ্রের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে চার জনকে আগে দুর্গাপুরের ইএসআই হাসপাতালে, পরে সেখানকার একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
এমটিপিএসের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ১ (প্রকল্প প্রধান) সুধীরকুমার ঝাঁ বলেন, “দুর্ঘটনার কারণ জানতে ডিভিসির অন্যান্য প্রকল্প থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।” এ দিনের দুর্ঘটনার জেরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এই দুর্ঘটনায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলার শিল্পাঞ্চলে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যুও বেশ কয়েকবার ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিয়ে কাজ না করার অভিযোগ ওঠে। তবে এমটিপিএস-এর মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় এমন ঘটনা ঘটায়বড়সড় প্রশ্ন উঠছে।
গঙ্গাজলঘাটি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি নিমাই মাজি বলেন, “এমটিপিএসে যাতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয় তা নিয়ে আমরা প্রায়ই সতর্ক করি। তারপরেও এই ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। কী ভাবে ঘটনাটি ঘটল, তা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে জানতে চাইব।’’
এমটিপিএস সূত্রে দাবি, এ দিন দুপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২২০ কিলোভোল্ট সুইচ ইয়ার্ডে শ্রমিকেরা কাজ করছিলেন। দুর্ঘটনার সময় লাইটনিং অ্যারেস্ট জ়োনে ২৪০ নম্বর লাইনে বিদ্যুৎ লিকেজ পরিমাপ করতে গিয়েছিলেন শ্রমিকেরা। হঠাৎই সেখানে কোনও ভাবে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের জেরে ঝলসে যানচার শ্রমিক।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের আধিকারিকদের একাংশের কথায়, ওই কাজ করার সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা একান্তই দরকার। এ ছাড়া শ্রমিকদের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ টেকনিসিয়ান ও ইঞ্জিনিয়ারদের থাকার কথা। এক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায়নি বলে অনেকের অভিযোগ। কাজ করার করার সময় শ্রমিকেরা অগ্নিনির্বাপক পোশাকও পরেননি বলেও অভিযোগ।
যদিও এই দাবি মানেননি চিফ ইঞ্জিনিয়ার ১। তাঁর দাবি, “বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে লিকেজ টেস্ট করা যায় না। শ্রমিকেরা প্রতিদিন ওই কাজ করেন। তাঁদের বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় কাজের জন্য। শ্রমিকেরা অগ্নিনির্বাপক পোশাক পরছেন কি না, তাও নজরে রাখা হয়।”
তার পরেও কী ভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা?
চিফ ইঞ্জিনিয়ার ১ সুধীরকুমার বলেন, ‘‘এমন দুর্ঘটনা আগে ঘটেনি। আমরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তদন্ত কমিটি সব কিছু খতিয়ে দেখে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেবে। কারণ অনুসন্ধান করে আগামী দিনে আরও সতর্কতা অবলম্বনকরা হবে।”