গ্রেফতার জ্যোতিপ্রিয়। —ফাইল চিত্র।
রেশনে দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমানে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করেছে ইডি। ঘটনায় শাসকদল তৃণমূলকে আক্রমণ শানাতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। এই আবহে রেশনে সরবরাহ করা আটা নিয়ে তোলা দুর্নীতির পুরনো অভিযোগ উস্কে ফের সরব হলেন পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো। তাঁর দাবি, জ্যোতিপ্রিয় খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ওই দুর্নীতির কার্যত ‘লোক-দেখানো’ তদন্ত করে বিষয়টি ‘ধামাচাপা’ দেওয়া হয়।
নেপাল জানান, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে ঘটনাটি নজরে আসে। সে সময়ে রেশনে গ্রাহকদের যে আটার প্যাকেট সরবরাহ করা হচ্ছিল, সেগুলিতে সংশ্লিষ্ট আটা বিশেষ ভিটামিনযুক্ত উল্লেখ করে এক মাসের মধ্যে ব্যবহারের কথা লেখা থাকত। কেন্দ্রীয় সরকার গ্রাহকদের জন্য গম দিলেও গ্রামের মানুষের গম ভাঙাতে সমস্যা হওয়ায় রাজ্য সরকার গ্রাহকদের প্যাকেটবন্দি আটা সরবরাহ করত। তাঁর দাবি, “তবে আমাদের কর্মীরা বিভিন্ন গ্রামের গ্রাহকদের কাছ থেকে এমন কিছু আটার প্যাকেটগুলি সংগ্রহ করেছিলেন, যেগুলিতে আটা তৈরির তারিখের কোনও উল্লেখ ছিল না। ছিল না কোন সময়ের মধ্যে তা ব্যবহার করতে হবে, তার উল্লেখও।”
তাঁর অভিযোগ, “পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রাহকেরা অনেকে ওই আটা খাওয়ার উপযুক্ত নয় বলছেন। আসলে কৌশলে ওই প্রচার করা হয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে ওই প্যাকেটগুলি দালালেরা অল্প দামে কিনে নিত। পরে নানা হাত ঘুরে তা যেত পুনরায় সরবরাহের জন্য। তাই প্যাকেটের গায়ে আটা তৈরির তারিখ বা কোন সময়ের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে, তার উল্লেখ থাকত না।”
বিষয়টি জেলা খাদ্য দফতরের নজরে আনার পাশাপাশি প্রস্তুতির তারিখবিহীন আটার প্যাকেট বিধানসভায় তুলে ধরে এর পরে তদন্তের দাবি জানান নেপাল। তাঁর অভিযোগ, “সে সময়ে খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি পাল্টা প্রস্তুতকরণের তারিখ সম্বলিত কয়েকটি আটার প্যাকেট বিধানসভায় তুলে ধরলেও পুরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকে পাওয়া ওই আটার প্যাকেটগুলির গায়ে তারিখের উল্লেখ নেই কেন, তার সদুত্তর দিতে পারেননি। দুর্নীতি স্পষ্ট হলেও সে ভাবে তদন্ত হয়নি। যা হয়েছিল লোক দেখানো।” বর্তমানে পুরুলিয়ার বিজেপি বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়, যিনি সে সময়ে কংগ্রেসে ছিলেন বলেন, “নেপালদা প্রস্তুতকরণের তারিখবিহীন আটার প্যাকেট নিয়ে বিধানসভায় সরব হওয়ার পাশাপাশি তদন্তের দাবি করেছিলেন। তবে সর্ষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে, কে তদন্ত করবে!”
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ ওঠার পরে খাদ্য দফতরের তরফে জেলায় আটা সরবরাহকারীদের বেশ কিছু গুদামে তল্লাশি চালানো হয়। আটার গুণগত মানও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল। সূত্রের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে আটার মান যথাযথ নয় বলেও রিপোর্টে উঠে আসে। তবে কিছু সময় পরে নজরদারি বন্ধ হয়ে যায় বলে দাবি। মাঝে বিভিন্ন মাসের জন্য আলাদা রঙের ট্যাগ দেওয়া আটার প্যাকেট সরবরাহ চালু হলেও তা বেশি দিন চলেনি। বর্তমানে আটার প্যাকেটে প্রস্তুতির তারিখের উল্লেখ করা থাকলেও কোথাও কোথাও আটার মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। জেলা খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, ওই সময়ে ঘটনা নিয়ে এখন মন্তব্য করা মুশকিল। জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “এটা কয়েক বছর আগের ঘটনা। যতদূর জানি, অভিযোগ ওঠার পরে প্রশাসন ঘটনার তদন্ত করে ও পরে নজরদারিতে পদক্ষেপ নিয়েছে।”