বাঁকুড়া মেডিক্যালের সুপার স্পেশালিটি ব্লক। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতাল চত্বরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাঁচ তলা ভবনটি। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে সুপার স্পেশালিটি ব্লক হওয়ার কথা। গত পাঁচ বছর ধরে সেটির নির্মাণ চলছে। যা নিয়ে সরব হয়েছেন বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার। তাঁর অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আঙুল তুলছেন নির্মাণের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় পূর্ত বিভাগের দিকে। কেন্দ্রীয় পূর্ত বিভাগ দাবি করছে, তাদের কাজ শেষ হয়েছে। তবে কবে চালু হবে ভবন, সে প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাচ্ছে না।
২০১৪ সালে কেন্দ্রের তরফে এই প্রকল্পে বরাদ্দ হয়। ভবন নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ১৫০ কোটি টাকার খরচ ধরা হয়েছে। তার মধ্যে ১২০ কোটি কেন্দ্রের ও ৩০ কোটি রাজ্যের দেওয়ার কথা। ২৫০টি শয্যা সংবলিত ভবনটিতে থাকবে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’ (সিসিইউ) ও প্রায় ১৬টি ওয়ার্ড। ২০১৫ সালে নির্মাণ শুরু হয়। পরে রাজ্যের তরফে জলের সংযোগ, রাস্তা গড়া ও নানা কাজের জন্য অতিরিক্ত ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
মেডিক্যালের কর্তারা জানান, নির্মাণ কাজ ও যন্ত্রপাতি বসানো শেষ হওয়ার পরে, ভবনটির হস্তান্তর হবে। গত বছর দুর্গা পুজোর মধ্যে সেই হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু এখনও কিছু কাজ বাকি থাকায় তা হয়ে ওঠেনি। বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, “কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর ওই সুপার স্পেশালিটি ব্লকের ভবন গড়া ও যন্ত্রপাতি বসানোর দায়িত্বে রয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পূর্ত দফতরের কর্তারা যৌথ ভাবে ভবনটি পরিদর্শন করেছেন। রাজ্য পূর্ত দফতরের নজরে এসেছে, ভবন নির্মাণের এখনও বিস্তর কাজ বাকি। তা শেষ না হলে হস্তান্তর হবে না।”
এ দিকে, কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার (দুর্গাপুর) সিপি শর্মার দাবি, ‘‘আমাদের তরফে যা করার কথা ছিল, সব করেছি। শুধু চিকিৎসার যন্ত্রপাতি বসানো বাকি। সেটা অন্য একটি সংস্থা করবে।’’
বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষবাবু বলেন, “কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর কাজ শেষ করে ফেলেছে। কিন্তু রাজ্য সরকার এখনও কর্মী নিয়োগ না করায় ভবনটি হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। নির্মাণকারী সংস্থার উপরে দায় চাপিয়ে এ ভাবে নিজেদের গাফিলতি ঢাকা যাবে না। আসলে সমস্যাটা মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের মানসিকতার।’’
আবার, বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ দাবি করেছেন, গত বছরই রাজ্য সরকার ওই সুপার স্পেশালিটি ব্লকের জন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে ১১৮টি শূন্য পদ তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে কিছু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে সেখানে নিয়োগ করা হয়েছে।
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা বলেন, “সুভাষবাবু বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছেন। উনি নির্মাণকারী সংস্থাকে দ্রুত সব কাজ শেষ করতে তাগাদা দিলে সমস্যা মিটবে।”
বাঁকুড়া মেডিক্যালে পরিকাঠামোর তুলনায় অনেক বেশি রোগী ভর্তি হন। ওয়ার্ডে শয্যার অভাবে অনেকেরই ঠাঁই হয় মেঝেয়। এই পরিস্থিতিতে নবনির্মিত ভবন চালু হলে, রোগীদের সমস্যার সুরাহা হবে বলে মনে করছেন অনেকে। মেডিক্যালের অধ্যক্ষ বলেন, “আমরাও দ্রুত ওই ভবনে পরিষেবা চালু করতে চাই।”