প্রতীকী ছবি
স্কুল চত্বরে উপস্থিত একটি ছোট গাড়ি। সেখানে বিশাল মাপের একটি এলইডি মনিটর। ল্যাপটপ সংযুক্ত বিশাল রঙিন মনিটরে পাঠ্যবইয়ের নীরস ও জটিল বিষয়গুলি অডিয়ো এবং ভিডিয়োর মাধ্যমে জীবন্ত ভাবে ফুটে উঠছে। তাতেই মজে ছোট ছোট পড়ুয়ারা।
কোনও বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ‘স্মার্টক্লাস’-এর দৃশ্য এটি নয়। আজ, শুক্রবার এই ছবিটাই বাস্তব হতে চলেছে সিউড়ি সদর, পূর্ব ও পশ্চিম চক্রের ৯টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে। পাঠ্যবইয়ের পড়ার বিষয়বস্তুকে খুদে পড়ুয়াদের কাছে আকর্ষণীয় করতে ‘নলেজ অন হুইলস’ নামে এই কর্মসূচি নেওয়ার পিছনে রয়েছে সমগ্রশিক্ষা মিশন ও বীরভূম জেলা প্রশাসনের ভাবনা। আজ সেটির উদ্বোধন করবেন জেলাশাসক মৌমিতা গৌদারা বসু। সমগ্র শিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক বাপ্পা গোস্বামী বলছেন, ‘‘পড়ুয়াদের কাছে পাঠ্য বিষয়কে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেই এই পরীক্ষামূলক উদ্যোগ।’’
সমগ্র শিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়ুয়াদের হাজিরা নিয়মিত নয়, মিড-ডে মিল হলেই বাড়ির পথে বা বাড়ায় পড়ুয়ারা অথবা স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে— সেই দিক বিচার করে ৯টি স্কুল বাছা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, গড়িটি সোম, বুধ ও শুক্রবার—সপ্তাহে তিন দিন পালা করে তিনটি স্কুলে দেড় ঘণ্টা করে থাকবে। আজ সিউড়ি সদর চক্রের ছোট আলুন্দা, ইটাগড়িয়া ও জুনিদপুর প্রাথমিক স্কুলে যাবে ওই গাড়টি। উদ্দেশ্য সফল হলে আগামী দিনে স্কুল ও ‘নলেজ অন হুইলস’-এর সংখ্যা বাড়বে।
তবে এই ভাবনার পিছনে জেলাশাসকের স্বপ্নের ‘আলোর পথে’-র সাফল্য রয়েছে। ছ’মাস আগে মহম্মদবাজারের ২১টি স্কুলে স্মার্টক্লাস গড়ে দিয়েছে প্রশাসন। মহম্মদবাজারের পাথর শিল্পাঞ্চলে সব চেয়ে বেশি ক্রাশার রয়েছে হিংলো ও ভাড়কাঁটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। মূলত ওই দু’টি পঞ্চায়েত এলাকার স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের হাজিরা কমছিল হু হু করে। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কাগজে কলমে যা, উপস্থিতির সংখ্যা আসলে ছিল অনেক কম। সেটাই উদ্বিগ্ন করেছিল জেলাশাসককে। তার পরেই সমীক্ষার ভিত্তিতে পাঠ্যবিষয় পড়ুয়াদের কাছে আরও আকর্ষণীয় ও সহজতর উপায়ে তুলে ধরতে ২১টি স্কুলে পৌঁছে যায় কমিউনিটি কম্পিউটার বা ‘কে-ইয়ান’। কী ভাবে সেই যন্ত্র চালিয়ে পড়ুয়াদের পাঠ দিতে হবে, সে বিষয়ে বাছাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্মার্টক্লাস শুরু হয়েছে। সেই উদ্যোগ অনেকাংশে সফল।
সর্বশিক্ষা অভিযানের রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর বিকাশ রায় জানিয়েছেন, চক-ডাস্টার ও ব্ল্যাকবোর্ডের একঘেয়ে ক্লাসরুমকে পিছনে রেখে যদি ছোটছোট ছেলেমেয়েকে নতুন স্বাদ দেওয়া যায়, তা হলে পাঠদান আনন্দদায়ক হতে পারে। চিহ্নিত স্কুলগুলিতে সেটা কতটা সফল হবে, ‘নলেজ অন হুইলস’ পৌঁছতে শুরু করলেই সেটার আঁচ পাওয়া সম্ভব। খেলার ছলে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পাঠদানে ভাল সাড়া পাবেন বলে আশা শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও।