—প্রতীকী চিত্র।
কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের গাড়ি চাপা দেওয়ার হুমকির অভিযোগ উঠল প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে। এই মর্মে পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুরের প্রাক্তন বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন নিতুড়িয়ার সড়বড়ির পঞ্চকোট মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও দুই শিক্ষক। কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য পূর্ণচন্দ্র অবশ্য অভিযোগ মানেননি।
কলেজের অধ্যক্ষ সপ্তর্ষি চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘মঙ্গলবার দুপুর ৩টে নাগাদ প্রাক্তন বিধায়ক কলেজে এসে সড়বড়ি মোড়ে গাড়ি চাপা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এতে শিক্ষকেরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। পুরো ঘটনাটি পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। অভিযোগের প্রতিলিপি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হয়েছে।’’
সূত্রের খবর, পূর্ণচন্দ্রের স্ত্রী তথা জেলা পরিষদের সদস্য সন্তোষী দত্তকে ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসাবে নিয়োগের দাবিকে ঘিরে সমস্যার সূত্রপাত। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর কলেজ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসাবে সন্তোষী দত্তকে নিয়োগের নির্দেশ দেন। যদিও অধ্যক্ষের দাবি, চিঠিতে সন্তোষী দত্তের নাম থাকলেও তাঁর ঠিকানা হিসাবে কলেজের নাম উল্লেখ রয়েছে। অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘কলেজে সন্তোষী দত্ত নামে অনেকেই আছেন। তাই কোন সন্তোষী দত্তকে সভাপতি নিয়োগ করা হবে তা জানতে চেয়ে ১৫-২০ দিন আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তার ব্যাখ্যা আসেনি। তাই সভাপতি নিয়োগ করা যাচ্ছে না।” বিভিন্ন মহলের দাবি, মূলত সেই ক্ষোভেই পূর্ণচন্দ্র কলেজে এসে কিছু শিক্ষককে হুমকি দেন।
যদিও পূর্ণচন্দ্রের দাবি, কলেজে চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কয়েকজন বেতন পাচ্ছেন না। কিছু শিক্ষক সময়ে কলেজে আসেন না। অধ্যক্ষও প্রায় দিন কলেজে অনুপস্থিত থাকেন। ছ’মাস ধরে কলেজের পরিচালন সমিতির সভাও ডাকছেন না অধ্যক্ষ। বিষয়গুলি কিছু শিক্ষক ও পড়ুয়া তাঁকে দেখতে অনুরোধ করেছিলেন। এ সব নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে তিনি মঙ্গলবার কলেজে গিয়েছিলেন। কিন্তু আগাম জানানো সত্ত্বেও সে দিন অধ্যক্ষ কলেজে যাননি। পূর্ণচন্দ্রের দাবি, ‘‘কলেজে গিয়ে দেখি, কয়েকজন শিক্ষক ছুটির আগেই বেরিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের আটকে কেন চলে যাচ্ছেন শুধু সেটুকু জানতে চেয়েছিলাম। হুমকি দেওয়া হয়নি।’’
যদিও অধ্যক্ষের দাবি, সন্তোষী দত্তকে পরিচালন সমিতির সভাপতি নিয়োগ করতে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে। তাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে সে দিন কলেজে যেতে পারেননি। পূর্ণচন্দ্রের পাল্টা দাবি, ‘‘সভাপতি নিয়োগের জটিলতার বিষয়ে আলোচনা করতে পরিচালন সমিতির সভা ডাকতে অধ্যক্ষকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কয়েক জনকে নিয়ে নিজস্ব স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যে কলেজ চালাচ্ছেন।’’
বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের ভাঙড়ের দাপুটে নেতা কলেজের শিক্ষিকাকে জলের মগ ছুড়েছিলেন। রঘুনাথপুরের প্রাক্তন বিধায়ক শিক্ষকদের গাড়ি চাপা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা সর্বত্রই হুমকি-প্রথা চালাচ্ছে তৃণমূল।” এ সব
ভিত্তিহীন অভিযোগ দাবি করে তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘যতদূর শুনেছি, পরিচালন সমিতির সদস্য হিসেবে কলেজ সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন পূর্ণবাবু। তার পরে আরও কিছু ঘটেছে কি না
খোঁজ নেব।”