বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শান্তিনিকেতনে উপাসনা গৃহের সামনে শিক্ষামূলক ভ্রমণে স্কুল পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।
ঠান্ডায় এমনিতেই কাঁপছিল বীরভূম। বুধবার রাত থেকে দোসর বৃষ্টি। বৃহস্পতিবারও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত ভিজেছে। তাতে ভোগন্তি আরও বেড়েছে। পরিস্থিতি এমন, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোতে চাইছেন না কেউ। শীতপোশাক ভিজে গেলে কাঁপুনির পাশাপাশি অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। সব মিলিয়ে অকাল বর্ষণে ভালই প্রভাব পড়েছে জেলার জনজীবনে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আজ, শুক্রবার থেকে অবস্থার উন্নতি হবে।
মকর সংক্রান্তির ঠিক আগে থেকে জাঁকিয়ে শীত পড়েছে জেলায়। গত শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা এই মরসুমের সবচেয়ে কম। তার পর থেকে টানা কয়েক দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০-এর নীচে ঘোরাফেরা করেছে। বুধবার দিনভর মেঘলা আকাশ ছিল জেলায়। রাতের দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃহস্পতিবারও মেঘলা ছিল আকাশ। একটু বেলার দিকে বৃষ্টিও হয়েছে। মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার পাশাপাশি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়ার পূর্বাভাসও ছিল আবহাওয়া দফতরের । সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়লেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যাওয়ায় সারাদিন কাঁপুনি টের পেয়েছেন জেলার মানুষ।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, দিনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তফাত কমলে কষ্ট বাড়ে। বুধবার বীরভূমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৭.৮। একই ভাবে বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থাকলেও সর্বোচ্চ ছিল ১৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে, এ দিন সকাল থেকেই মানুষজন কেঁপেছেন। তার উপরে বৃষ্টি ও ঠান্ডা বাতাস। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। জেলায় প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের বার্ষিক ক্রীড়া চলছে জেলার নানা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। শিক্ষকেরা বলছেন, প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে খুদে পড়ুয়ারা।
কৃষি ও উদ্যান পালন দফতরের দাবি, যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে বা মেঘলা আবহাওয়া রয়েছে, তাতে আলু চাষে সমস্যা হতে পারে। তবে, অন্য ফসলের জন্য সমস্যার কিছু নেই। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, বৃষ্টি ও কুয়াশায় আলু চাষের ছত্রাক ঘটিত রোগের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। জেলায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে এ বার আলু চাষ হয়েছে। এর আগেও বৃষ্টির জন্য ক্ষতি হয়েছে আলু চাষের। বুধবার রাতে বীরভূমে গড়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮.৭ মিলিমিটার। তুলনায় বোলপুর মহকুমায় বেশি বৃ্ষ্টি হয়েছে। ২৮ মিলিমিটার।
কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা জানান, যে বৃষ্টি বুধবার ও বৃহস্পতিবার হয়েছে, শুক্রবার থেকে রোদ উঠলে তাতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে, দিন কয়েক গেলে সেটা বোঝা যাবে। চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আগেই। বাকি ফসল সর্ষে, মুসুর বা বোরো চাষে কোনও সমস্যা নেই। বরং এই সব ফসল সেচ পেল। উপ-অধিকর্তা (উদ্যানপালন) সুফল মণ্ডল বলেন, ‘‘ এমন আবহওয়া দিন দুয়েক চললেও তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। বরং ভাল। তবে, আরও কয়েক দিন থাকলে ফুলকপি চাষে ক্ষতি হতে পারে।’’