বোলপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
‘‘ডেউচা পাঁচামি হবে কর্মসংস্থানের আলো।’’ বুধবার বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠের প্রশাসনিক কর্মসূচির মঞ্চ থেকে ফের মহম্মদবাজারে প্রস্তাবিত কয়লাখনি নিয়ে এ ভাবেই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, ‘‘প্রস্তাবিত খনির প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দু’বছরের মধ্যে প্রকল্প রূপায়িত হলে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ের চাকরি হবে।’’
এ দিনের সভা থেকে খনির জন্য জমিদাতা আরও ৩৫১ জনকে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, চাকরি প্রাপকদের মধ্যে ২৪১ জনকে জুনিয়র কনস্টেবল পদে এবং ১১০ জনকে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, যে পরিবারগুলিতে সরকারি চাকরি করার উপযুক্ত কেউ নেই বা সন্তানদের বয়স ১৮ ছোঁয়নি এমন ৫৪টি পরিবারকে সহায়ক ভাতা দেওয়াও শুরু হয়েছে। সভায় সে কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘জেলার ৯৫ শতাংশ মানুষের হাতে কোনও না কোনও সুবিধে তুলে দিয়েছি। এরপর ডেউচা পাঁচামিতে শিল্প করব।’’
প্রকল্পের শুরুতে খনি বিরোধী অবস্থান থাকলেও বর্তমানে বিরোধীদের সেই স্বর অনেক স্থিমিত। প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রথম পর্যায়ে যেখান থেকে খনির কাজ শুরু হবে সেই দেওয়ানগঞ্জ-হরিণশিঙা মৌজার প্রায় সকলেই জমি দিতে সম্মত হয়েছেন বা ইতিমধ্যেই কয়লা খনি গড়তে সেই জমি সরকারকে বিক্রি করে দিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে যেখানে খনি হবে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে সেই ডেউচা পাঁচামিতে জমি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মাটির নীচে কোথায় কত কয়লা জানতে সমীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে জমিদাতাদের চাকরি দেওয়া চলছে। চূড়ান্ত হয়েছে পুনর্বাসনের জমিও।
ডেউচার কাজের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রীও। তাঁর কথায়, ‘‘ডেউচা পাঁচামিতে মোট ৩৩৭০ একর জমি প্রয়োজন। তার মধ্যে ১ হাজার একর সরকারি জমি আছে। বাকি জমির মধ্যে অধিকাংশ জমিতেই জমিদাতারা সম্মতি দিয়ে দিয়েছেন। সে জন্য আমি ডেউচা পাঁচামির মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘আমরা সম্পূর্ণ পরিকল্পনা তৈরি করেছি। কেউ বঞ্চিত হবেন না। তাঁদের চাকরি থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি, স্কুল কলেজ, কর্মসংস্থান, ক্ষতিপূরণ দেওয়া সবটাই আমরা করব।’’
তবে ডেউচা পাঁচামিতে এখনও সামান্য হলেও খনি বিরোধী স্বরের অস্তিত্ত্ব থাকার জন্য বহিরাগতদেরই দায়ী করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এই প্রকল্প নিয়ে যাঁরা কলকাতা থেকে এবং বাইরে থেকে এসে স্থানীয় মানুষকে অপমান করেন, মিথ্যে বলেন তাঁরা দয়া করে বেকারদের স্বার্থে তা করবেন না। আমি জোর করে জমি নিই না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, ‘‘আগামী দু’বছরের মধ্যে যখন ওই প্রকল্প সম্পন্ন হবে তখন দেখবেন বীরভূমে জ্বলেছে আলো। শান্তিনিকেতনে থাক শিক্ষার আলো, ডেউচা পাঁচামিতে কর্মসংস্থানের আলো। সারা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা নগরী হবে। বিদ্যুতের দাম কমবে।’’