ঝালদার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পাশাপাশি বসে গল্প তিন দলের প্রার্থীদের। নিজস্ব চিত্র
প্রচার-পর্বে কেউ কাউকে জমি ছাড়েননি। সরব হয়েছেন পরস্পরের বিরুদ্ধে। ভোটের দিন তাঁদেরই দেখা গেল পাশাপাশি বসে গল্প করতে। নানা দলের প্রার্থীদের মধ্যে সৌজন্যের এমন ছবি উঠে এলে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার নানা পুরসভায়।
পুরুলিয়ার ঝালদার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বুথ থেকে কিছুটা দূরে পাশাপাশি চেয়ার পেতে বসেছিলেন বিজেপি প্রার্থী সুজাতা দরিপা, তৃণমূল প্রার্থী সুষমা পাঠক ও নির্দল প্রার্থী শিলা চট্টোপাধ্যায়। জমিয়ে চলল আড্ডা। সুজাতার কথায়, ‘‘হার-জিত তো থাকবেই। কিন্তু তা বলে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ করে লাভ কী?’’ সুষমা বলেন, ‘‘উৎসবের মেজাজে ভোট হচ্ছে। আমরাও জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছি।’’ শিলার কথায়, ‘‘প্রচার শেষ হতেই আমাদের মধ্যে দূরত্ব মিটে গিয়েছে।’’
পুরুলিয়ার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে শান্তময়ী গার্লস হাইস্কুলের বুথে পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী সঞ্জিত দত্ত ও বিজেপি প্রার্থী প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। ভোটারদের নানা প্রশ্নের জবাব এক সঙ্গেই দিচ্ছিলেন তাঁরা। এরই মধ্যে হাজির হলেন বাম প্রার্থী মণিকাঞ্চন দরিপা। তাঁকে দেখে দু’জনেরই প্রশ্ন, ‘‘সব ঠিক আছে?’’ মণিকাঞ্চনের জবাব, ‘‘এক দম।’’ ওই স্কুলেই বুথ ছিল ১২ নম্বর ওয়ার্ডেরও। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী জ্যোতির্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সেখানে। বিজেপি প্রার্থী সত্যজিৎ অধিকারী এসেই ভোট কেমন চলছে, সে নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেন। যোগ দিলেন কংগ্রেস প্রার্থী চিত্তরঞ্জন দাসও। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের ময়দানে আমরা প্রার্থী। তবে জ্যোতির্ময়বাবু আমার শিক্ষক।’’ জ্যোতির্ময়ের কথায়, ‘‘আমরা সহ-নাগরিক, এটা ভুললে চলবে না।’’
রঘুনাথপুরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে গার্লস হাইস্কুলের সামনে এক বেঞ্চে বসে আড্ডা দিতে দেখা যায় তৃণমূল প্রার্থী প্রণব দেওঘরিয়া, বিজেপি প্রার্থী বাণেশ্বর মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেস প্রার্থী রমাকান্ত দত্ত ও সিপিএম প্রার্থী দীনবন্ধু শিকদারকে। তাঁরা বলেন, ‘‘ভোটের প্রচারে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রচার করেছি। তবে তা তো রাজনৈতিক। তার বাইরেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে।’’ শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে এমএম হাইস্কুলে ভোটের শেষ লগ্নে দেখা যায়, আড্ডায় মেতেছেন তৃণমূল প্রার্থী আনন্দ বাউড়ি, কংগ্রেসের সুভাষ বাউড়ি, সিপিএমে সত্যজিৎ বাউড়িরা। একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এসইউসি প্রার্থী সত্যজিৎ বাউড়িকেও ডেকে নিলেন সুভাষ। গল্প চলল জমিয়ে। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া ও জেলা বিজেপি সভাপতি বিবেক রঙ্গার দাবি, ‘‘পুরুলিয়ার
এটাই সংস্কৃতি।’’
বাঁকুড়া শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি ও নির্দল প্রার্থীর দেখা হয়ে গেল গোয়েঙ্কা বিদ্যায়তন স্কুলের বুথে। চার জনই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পড়লেন ছবি তোলার জন্য। নির্দল প্রার্থী তথা তৃণমূল পরিচালিত গত পুর-বোর্ডের উপ-প্রধান দিলীপ আগরওয়াল, সিপিএম প্রার্থী রাজু বাউরি, তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বনাথ সিংহ ও বিজেপি প্রার্থী দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায়েরা জানালেন, ভোটের লড়াই আলাদা, তবে ব্যক্তিগত কোনও দ্বন্দ্ব নেই।
নানা পুরসভাতেই এমন সৌজন্যের নানা ছবি দেখা গিয়েছে। কোথাও তৃণমূল কর্মীর আনা টিফিনে ভাগ বসাতে দেখা যায় বিজেপির কর্মীকে। আবার কোথাও কংগ্রেস কর্মীর কাছ থেকে জলের বোতল নিয়ে গলা ভেজাতে দেখা যায় সিপিএম কর্মীকে। সাধুবাদ জানিয়েছেন ভোটারেরাও।