ভোটের মুখে বাঁধ সংস্কারে দুই প্রার্থী

বিষ্ণুপুরের গর্বের সাতটি বাঁধ এখন মজে গিয়েছে। সংস্কারের দাবি নিয়ে বারবার পুরবাসী পুরসভা ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদ্যোগহীনতার অভিযোগ তুলেছেন। এ বার পুরভোটের মুখে শুক্রবার সেই শাসকদলেরই দুই প্রার্থীকে দেখা গেল যমুনাবাঁধ সংস্কারে নামতে। এ নিয়ে বাসিন্দারা দু’ভাগ। কেউ বলছেন, ভোট বড় বালাই। তাই ভোট টানতে নয়া প্রচার। আবার অন্য পক্ষের যুক্তি, ভোটার জন্যেও একদিনের এই বাঁধ সংস্কার কিছুদিনের জন্যে ঘাটটাকে স্নানের উপযোগী করল। তাই বা কম কী!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২১
Share:

ভোট বড় দায়। বিষ্ণুপুরের যমুনাবাঁধে দলবল নিয়ে নেমে পড়েছেন তৃণমূলের দুই প্রার্থী।— নিজস্ব চিত্র।

বিষ্ণুপুরের গর্বের সাতটি বাঁধ এখন মজে গিয়েছে। সংস্কারের দাবি নিয়ে বারবার পুরবাসী পুরসভা ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদ্যোগহীনতার অভিযোগ তুলেছেন। এ বার পুরভোটের মুখে শুক্রবার সেই শাসকদলেরই দুই প্রার্থীকে দেখা গেল যমুনাবাঁধ সংস্কারে নামতে। এ নিয়ে বাসিন্দারা দু’ভাগ। কেউ বলছেন, ভোট বড় বালাই। তাই ভোট টানতে নয়া প্রচার। আবার অন্য পক্ষের যুক্তি, ভোটার জন্যেও একদিনের এই বাঁধ সংস্কার কিছুদিনের জন্যে ঘাটটাকে স্নানের উপযোগী করল। তাই বা কম কী!

Advertisement

মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুরের অন্যতম গর্ব ছিল সাতটি বাঁধের টলটলে জল। যার দৌলতে বাঁকুড়ার তীব্র খরা পরিস্থিতিতেও বিষ্ণুপুরের জল সঙ্কট অনেকটাই মেটানো সম্ভব হতো। কিন্তু সংস্কারের অভাবে সব বাঁধেরই এখন রুগ্ন দশা। একদিকে পানায় ঢেকে গিয়েছে বাঁধের অনেকখানি। তার উপরে কয়েকটি বাঁধের একাংশ ভরাট করারও অভিযোগ উঠেছে। বাসিন্দারা বারবার বাঁধ সংস্কারের দাবি জানালেও প্রশাসনেও উদ্যোগ তেমন নজরে পড়েনি। প্রশাসন উল্টে বাঁধগুলি শরিকি সম্পত্তি বলে দায় এড়িয়েছে। বাসিন্দাদের সেই ভাবাবেগকে কাজে লাগাতে এ বার সেই বাঁধ সংস্কারকেই প্রচারের হাতিয়ার করলেন দুই তৃণমূল প্রার্থী। পুরভোটের আগে জনসংযোগ বাড়াতে দলীয় কর্মীদের নিয়ে বাঁধের পানা পরিষ্কারে নেমে পড়লেন তাঁরা।

রোজ প্রায় কয়েক হাজার মানুষ ওই বাঁধে স্নান সারেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী রবিলোচন দে (লালু) ও ও ১২ নম্বরের প্রার্থী আনন্দ রায়। এ দিন সকালে বাঁধের পাড়ে গিয়ে দেখা গেল, জনা পঞ্চাশেক দলীয় কর্মীকে নিয়ে পানা পরিষ্কারে হাত লাগিয়েছেন ওই দুই প্রার্থী। সঙ্গে তৃণমূলের ছাত্র নেতা হীরালাল দত্ত, শান্তিনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁরা জানান, সংস্কারের অভাবে বাঁধটি মজে যাওয়ার অবস্থায়। বাঁধের স্নানঘাটগুলি পানায় ঢেকে গিয়েছে। অথচ শহরের সবচেয়ে বেশি মানুষ স্নান সারেন এখানে। তাই এই উদ্যোগ।

Advertisement

কিন্তু পুরভোটের আগেই কেন? প্রশ্ন শুনে রবিলোচনবাবুর দাবি, ‘‘আমি ছেলেবেলা থেকে এই বাঁধের জলে স্নান করে আসছি। আগেও বহুবার স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে এই বাঁধ সংস্কার করেছি। এ বার অবশ্য দলীয় কর্মীদের নিয়েই পানা পরিষ্কার করলাম। অস্বীকার করছি না এর মাধ্যমে অবশ্যই জনসংযোগের কাজটাও হয়ে যাচ্ছে।” রবিলোচনবাবু ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর। আর আনন্দবাবু ভোটের ময়দানে নতুন। তিনিও রবিলোচনবাবুর সুরেই গলা মিলিয়ে বলেন, “আমার এই বাঁধের পাড়েই বাড়ি। চোখের সামনেই বাঁধটিকে শুকিয়ে যেতে দেখছি। ঘাটগুলি পানায় ভরে গিয়েছে। এলাকার মানুষের স্বার্থে কাজে হাত লাগালাম। ভোটে জিতলে এ ভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করব।’’

বাঁধে স্নান করতে আসা জয়ন্ত গুঁই, সুশান্ত লোহার, অরূপ রায়, গাঁধী লোহার বলেন, “ঘাটগুলো পানায় ঢেকে গিয়েছে। খুবই খারাপ অবস্থা। এই অবস্থায় ওই দুই প্রার্থী হাত লাগিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন এটাও কম কী!’’ তাঁদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিষ্ণুপুরের পাঁচবারের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়। পুরসভা এই কাজ কেন করেনিয শ্যামবাবু বলেন, ‘‘বাঁধগুলি সবই শরিকি সম্পত্তি। ফলে সংস্কারে নানা সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া বাঁধ সংস্কারে পুরসভারও বিশেষ কিছু করার ক্ষমতা নেই। তাই জেলা পরিষদকে দিয়ে সংস্কারের চেষ্টা চলছে।’’

বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘এ সবই গিমিক। লোকে সব বোঝে। ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট সরকার বাঁধগুলিকে বাঁচাতে কিছুই করেনি। চারবছরে তৃণমূল সরকারেরও কোনও উদ্যোগ নেই।’’ তবে সিপিএমের বিষ্ণুপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক অনিল পণ্ডিত দাবি করেছেন, কয়েক বছর আগে বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতি থেকে যমুনাবাঁধের একাংশ সংস্কার করা হয়েছিল।

পুরবাসী অবশ্য রাজনীতির ঘোলা জলে নামতে নারাজ। তাঁদের মতে, আর যাই হোক, পুরভোটের দৌলতে বাঁধের ঘাটটা তো অন্তত কয়েকদিনের জন্য সাফ হল। নিশ্চিন্তে স্নান করা যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement