রোগীর পাশে অস্ত্রোপচারকারী দুই চিকিৎসক। নিজস্ব চিত্র
করোনা সংক্রমণের আবহে মুখগহ্বরের জটিল অস্ত্রোপচার হল পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এক ব্যক্তির জিভে ক্যানসার হয়েছে। হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে তাঁর জিভের বেশ কিছুটা বাদ দিয়েছেন। হাসপাতালের সুপার সুকোমল বিষয়ী বলেন, ‘‘এই ধরনের অস্ত্রোপচার পুরুলিয়ায় প্রথম হল।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহ দু’য়েক আগে বাঘমুণ্ডির একটি গ্রামের বাসিন্দা এক যুবক হাসপাতালের জিভের সমস্যা নিয়ে নাক-কান-গলা বিভাগে গিয়েছিলেন। ওই বিভাগের ডাক্তার সৈকত সাঁতরা জানান, তাঁর জিভের ডান দিকে ঘা হয়েছিল। বেশ কিছু দিন ধরে নানা ওষুধ খেয়েও সারছিল না। সৈকতবাবু বলেন, ‘‘কথা বলে জানতে পারি, ছ’-সাত মাস আগে তাঁর জিভে এই সমস্যা প্রথম দেখা দেয়। ভিটামিনের অভাবে জিভের ঘা হয়েছে ভেবে প্রথমে কিছু দিন ভিটামিন জাতীয় ওষুধ খেয়েছিলেন। না সারায় স্থানীয় চিকিৎসককে দেখান। আরও কিছু দিন ওষুধ খেলেও সারেনি। তার পরে পুরুলিয়ার কোনও চিকিৎসক বড় কোথাও যাওয়ার পরামর্শ দেন।’’
কোভিড পরীক্ষা করিয়ে পুরুলিয়া মেডিক্যালে ওই যুবকের চিকিৎসা শুরু হয়। পরীক্ষা করে জানা যায়, জিভে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এ দিকে, ওই যুবক জানিয়েছিলেন, তাঁর বাইরে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। পুরুলিয়া মেডিক্যালেই চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত হয়। আরও এক প্রস্ত কোভিড পরীক্ষার পরে, বুধবার তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। সৈকতবাবু বলেন, ‘‘জিভের ডান দিকের এক তৃতীয়াংশ বাদ দিতে হয়েছে। কথা বলার জন্য জিভের ডগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। সেই অংশটি রেখেই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতে না পারলেও কিছুটা কথা বলতে পারবেন তিনি।’’
পুরুলিয়া মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নাক-কান-গলা বিভাগের দুই চিকিৎসক সৈকত সমাদ্দার ও অমিতবিক্রম মাইতি এবং অ্যানাস্থেসিস্ট অনমিত্র মণ্ডল দু’ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচারটি করেছেন। ডাক্তারেরা জানান, জিভের মধ্যে একাধিক ধমনী থাকে। ধমনী কাটলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এ ক্ষেত্রেও তা হচ্ছিল। রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগেছে। চিকিৎসার পরিভাষায় এই অস্ত্রোপচারকে বলা হয় ‘গ্লসেক্টমি’। বর্তমান পরিস্থিতিতে মুখগহ্বরের কোনও অস্ত্রোপচার খুব জরুরি না হলে না করারই পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। এ ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা দেখেই দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
চিকিৎসক অমিতবিক্রম মাইতি বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানা গিয়েছে, তিনি খুব গুটখা খেতেন। এই কারণেও জিভে বা মুখে ক্যানসার হতে পারে। পুরুলিয়ায় আমরা দেখছি, প্রচুর মানুষ মুখগহ্বরের সমস্যায় ভুগছেন। অনেকেই আসছেন দেরি করে। ততক্ষণে রোগ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।’’ অস্ত্রোপচার হওয়া যুবকের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন তিনি। আরও কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রাখার পরে তাঁকে ছুটি দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। ওই যুবকের ভাই বলেন, ‘‘সামান্য আনাজ চাষ আর দিনমজুরি করে আমাদের সংসার চলে। বাইরে চিকিৎসা করানোর মতো সঙ্গতি নেই। ডাক্তারেরা এখানে অস্ত্রোপচার না করলে, কী হত জানি না।’’