সুনসান: মুকুটমণিপুর জলাধারে পর্যটকদের ভিড় কমেছে। নিজস্ব চিত্র
ঘন কুয়াশায় ভোর হলেও বেলা গড়াতেই তেজ ঝরাচ্ছে সূর্য। রোদে বেশিক্ষণ দাঁড়ানোই দায়! পশ্চিমি ঝঞ্ঝায় উত্তুরে হাওয়া বাধা পাওয়ায় মধ্য জানুয়ারিতেই ভোল বদলে গিয়েছে শীতের। এতে চিন্তায় পড়েছেন মুকুটমণিপুরের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আশঙ্কা, ছুটির দিন এবং রবিবারে পিকনিকের সেই ভিড় কি আর এ বার পাওয়া যাবে?
অনেকদিন পরে এ বার পর্যটন মরসুমে কানায় কানায় পূর্ণ মুকুটমণিপুরের কংসাবতী জলাধার। চারপাশে টলমলে জল। শীতের নরম রোদ গায়ে মেখে ভরা মুকুটমণিপুরে পর্যটকেরা নৌবিহার করেন। কিন্তু রোদ তেতেপুড়ে উঠলে নৌবিহার কি জমবে?— প্রশ্ন ছুড়ছেন ‘মুকুটমণিপুর নৌকাবিহার সমবায় সমিতি’র সম্পাদক তারাপদ সিং সর্দার। তিনি বলেন, ‘‘ভরা শীতে নৌকায় মুকুটমণিপুর জলাধারে ঘোরার আনন্দই আলাদা। কিন্তু গরমে কেউ নৌকায় চাপতে চান না। তাই মরসুমের মাঝপথে পর্যটক কমলে সমিতির সঙ্গে যুক্ত ৬০টিরও বেশি পরিবারের রুটি-রুজির সমস্যা হবে।’’
রবিবার মুকুটমণিপুরে গিয়ে পর্যটকদের চেনা ভিড় নজরে আসেনি। সাকুল্যে ৭০টি বাস ও ২০০টি ছোট গাড়ি এসেছিল। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, অন্য বছর এই সময়ে প্রায় দ্বিগুণ বাস ও ছোট গাড়ি আসত। ক’দি আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থেকে সস্ত্রীক বেড়াতে এসেছিলেন দীপক সামন্ত, শিখা সামন্ত। নৌকা বিহার সমবায় সমিতির ফেরিঘাটের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরা বলেন, ‘‘জানুয়ারি শেষ হতে এখনও দেরি। তার মধ্যেই এ ভাবে শীত চলে যাবে ভাবতে পারছি না। রোদের তেজে গা জ্বালা করতে শুরু করেছে।’’
পর্যটকদের এমন মনোভাবেই চিন্তায় ‘মুকুটমণিপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিপুল সাহু। তিনি বলেন, ‘‘পর্যটনের উপরে নির্ভর করে এখানকার প্রায় পাঁচ শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সারা বছরের রুটি-রুজি চলে। কিন্তু এ ভাবে শীত উধাও হয়ে গেলে পর্যটকেরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন। আমাদের সংসার চলবে কী ভাবে?’’
মুকুটমণিপুরের পরেশনাথে ফি বছর ঝালমুড়ি বিক্রি করতে আসেন ইঁদপুরের পায়রাচালি গ্রামের দীপক বাগদি। সেখানেই মনিহারি জিনিসের দোকান শ্যামল বাগদির। তাঁদের আশঙ্কা, ‘‘এই ক’টা মাসই যেটুকু খদ্দের পাওয়া যায়। কিন্তু এ বার শীত গিয়ে গরম এগিয়ে এলে ব্যবসার ভরাডুবি ঘটবে।’’
চিন্তায় হোটেল, লজের ব্যবসায়ীরাও। ‘মুকুটমণিপুর হোটেল ওয়েলফেয়ার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’- এর সভাপতি সুদীপ সাহু, সদস্য সঞ্জীব দত্ত ও তাপসকুমার মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে রাজ্যের কিছু জায়গায় অশান্তিতে কিছু ‘বুকিং’ বাতিল হয়েছিল। এখন শীত কমায় কী হবে চিন্তায় রয়েছি।’’
তবে কেউ কেউ এখনও শীত ফেরার হাল ছাড়তে নারাজ। তাঁরা আশা করছেন, শেষ বেলায় শীত খেল দেখাতেও ফিরতে পারে। মাঘের শীতে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের সাধ পূরণ হয় কি না, সময়ই জানে।