সেই গুলি। নিজস্ব চিত্র sujit4abp2023@gmail.com
খুনের মামলায় জামিন পাওয়া এক ব্যক্তির গাড়িতে চেপে যাওয়ার সময়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির বাসিন্দা গোবিন্দ মণ্ডল। বুধবার পুরুলিয়া মেডিক্যালে অস্ত্রোপচার করে তাঁর মাথা থেকে গুলি বার করা হল। বাঁকুড়া জেলা পুলিশ গুলিটি সংগ্রহ করেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
মঙ্গলবার হাসপাতালে আনা হয়েছিল গোবিন্দকে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ দিন দুপুরে হাসপাতালের নয়া ক্যাম্পাসে অস্ত্রোপচার করে গুলি বার করেন পাঁচ শল্য চিকিৎসক সোমনাথ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল হালদার, পবন মণ্ডল, সিদ্ধেশ্বর কিস্কু, সাগুন সরেন। ছিলেন নার্স শ্বেতা দাসকর্মকার।
গোবিন্দর বাড়ি গঙ্গাজলঘাঁটির পাপড়াডিহি গ্রামে। পবন বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি মঙ্গলবার বহির্বিভাগে এসেছিলেন। তিনি জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর বাঁকুড়া থেকে ফেরার পথে গাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গাড়ির কাচ ভেদ করে গুলি তাঁর মাথায় লেগেছিল। পরিচিত কেউ তাঁকে পুরুলিয়ায় পাঠান। পরিস্থিতি দেখেই দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিই। পুলিশকে ঘটনাটি জানানো হয়।’’
এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অস্ত্রোপচার চলে। ওই চিকিৎসক জানান, গোবিন্দর ডান কানের প্রায় দেড় ইঞ্চি উপরে খুলি ভেদ করে বিঁধেছিল বুলেটটি। তাঁর কথায়, ‘‘বুলেটটি অক্সিবিটো টেম্পোরাল বোন নামে খুলির হাড়ে গিঁথেছিল। ক্ষতস্থলটি ব্রেনের একদম লাগোয়া। খুলির ভাঙা হাড় ব্রেনে ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। এই ধরনের ক্ষতকে ডিপ্রেস ফ্যাক্টর বলা হয়। এতে রোগীর কোমায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়নি।’’ তিনি জানান, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। আপাতত রোগী স্থিতিশীল।
মেডিক্যালের সুপার সুকোমল বিষয়ী বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারটি নিঃসন্দেহে জটিল। এই ধরনের অস্ত্রোপচার আমাদের হাসপাতালে আগে কখনও হয়নি। চিকিৎসকেরা অনেক চেষ্টায় সেটি সফল করেছেন। তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।‘‘
বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবিন্দকে প্রথমে বাঁকুডড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সুস্থ হওয়ার পরে তিনি হাসপাতাল থেকে নিয়েই ছুটি নিয়ে নেন। তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে পুলিশের।
এ দিন গোবিন্দর বাবা বলেন, ‘‘আমার ছেলে একটি খুনের মামলায় বাঁকুড়া সংশোধনাগারে ছিল। কয়েক মাস আগে ছাড়া পেয়েছিল ও। গত ৫ সেপ্টেম্বর বাঁকুড়া আদালতে গিয়েছিল গোবিন্দ। সে দিন বাঁকুড়া সংশোধনাগার থেকে আরও এক জন ছাড়া পায়। তার সঙ্গে ওই সংশোধনাগারেই আলাপ হয়েছিল ছেলের। ছেলে ভেবেছিল, বাড়ি ফেরার পথে ওই ব্যক্তির গাড়িতে হেবির মোড় পর্যন্ত আসবে। এই ভেবে গাড়িতে উঠেছিল ছেলে। ঘটনাচক্রে সে দিনই ঘটনাটি ঘটে’’
অস্ত্রোপচারের জন্য পুরুলিয়া মেডিক্যালে আনা হল কেন?
তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে ছেলেকে বাঁকুড়ায় ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু ও ভয়ে বাঁকুড়া থেকে ছুটি নিয়ে নেয়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করানোর কথা ভেবেছিল। কিন্তু ওখানে অস্ত্রোপচারের জন্য যে অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়, তা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তার পরে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসককে দেখিয়ে কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তিনিই পুরুলিয়ায় পাঠান।’’