এই খাল দখল করে গড়ে উঠেছে কয়েকটি অস্থায়ী দোকান। নিজস্ব চিত্র।
সরকারি নিকাশি খাল দখল করে আগেই বেশ কয়েকটি অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছিল। সম্প্রতি সেই এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি দোকান গড়ে উঠতে দেখে এ বার পদক্ষেপের দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন তৃণমূলের খোদ অঞ্চল সভাপতি। বাঁকুড়ার পাত্রসায়ের ব্লকের নাড়িচা মোড়ের এই ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে।
বাঁকুড়ার পাত্রসায়ের থেকে বিষ্ণুপুর যাওয়ার রাজ্য সড়কের উপরেই ছোট জনপদ নাড়িচা বাজার। এই বাজারে রাস্তার পাশেই রয়েছে একটি খাল। স্থানীয়েরা এই খালকে হরিণমুড়ি খাল নামে ডাকেন। এলাকার নিকাশি ছাড়াও সরকারি এই খাল সেচের কাজেও ব্যবহার হয়। বেশ কিছু দিন ধরে এই খালের উপর নাড়িচা মোড়ে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী দোকান তৈরি করে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি ওই খালের বিভিন্ন অংশ দখল করে ছোট-বড় প্রায় ১২টি পাকা বাড়ির নির্মাণ শুরু হয়। সরকারি জায়গা দখল করে একসঙ্গে এতগুলি বাড়ি তৈরির বিষয়টি নজর এড়ায়নি স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা দলের কুশদ্বীপ অঞ্চলের সভাপতি শাজাহান মিদ্যার। তিনি স্থানীয় ব্লক ভূমি সংস্কার দফতর ও বিডিও অফিসে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপের দাবি তুলে অভিযোগ জানান। এর পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শাজাহান মিদ্যা বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই এই নাড়িচা মোড়ে সরকারি জমি দখলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছিলাম প্রশাসনের কাছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। সম্প্রতি আবার দেখা যাচ্ছে ওই এলাকায় ১০ থেকে ১২টি পাকা বাড়ি সরকারি জায়গার উপরে গড়ে উঠছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন অবৈধ দখলদারি বন্ধ করতে। তাই ব্লক প্রশাসনকে আবার জানালাম। দেখা যাক প্রশাসন আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেয় কি না।’’
তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ জানাতেই তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক চাপানউতর। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘এ রাজ্যের সর্বত্রই এমন শাজাহানরা জমি দখল করছেন। শুধু এ ক্ষেত্রে ফারাক হল বিজেপির সংগঠন নাড়িচা এলাকায় যথেষ্ট শক্তিশালী। স্বাভাবিক ভাবে বিজেপি কর্মীরা ওই এলাকায় তৃণমূলকে সরকারি জমি দখল করতে বাধা দিচ্ছে। এই অবস্থায় নিজেদের পিঠ বাঁচাতে এখন তৃণমূল নেতা দখলদারির অভিযোগ এনে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন।’’ বিজেপির এমন অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারি জমি দখল করে অবৈধ নির্মাণ কোনও ভাবেই মেনে নেবে না রাজ্য সরকার। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এ ক্ষেত্রেও কড়া ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। বিজেপির স্থানীয় কর্মীরা নাড়িচা এলাকায় জমি দখলের সঙ্গে যুক্ত থেকে থাকতে পারে। কিন্তু তৃণমূলের কেউ যুক্ত নেই। আমাদের দল কোনও অবৈধ ও অনৈতিক কাজ বরদাস্ত করে না।’’
রাজনৈতিক তরজার মাঝেই বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার পরেই দ্রুত ঘটনার তদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি দেখা যায় অভিযোগের সত্যতা আছে, তা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’