Bolpur

WB Municipal Election 2022: পুরাণ মতে, পুজোয় ছাগবলি থেকেই অঞ্চলের নাম হয় বলিপুর, সেটাই এখনকার বোলপুর

তবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার অনেক আগেই বোলপুরের নাম উঠেছে ইতিহাসের পাতায়। বোলপুরের উল্লেখ রয়েছে প্রাচীন পুরাণে। পুরাণ মতে রাজা সুরথ অর্থাৎ যিনি কিনা মর্ত্যে প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন ঘটান, তাঁর রাজ্যের রাজধানী ছিল বোলপুর সংলগ্ন সুপুর এলাকায়।

Advertisement

রাজেন্দ্রনাথ সরকার

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:০০
Share:

বিশ্বভারতী চত্বর। —নিজস্ব চিত্র।

লোককথা, পুরাণ অনুষঙ্গ আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর— এই তিন নিয়েই বোলপুরের ইতিহাস। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, কিন্তু এটাই সত্যি যে রাজ্যের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর অবস্থান এবং আদালত, অফিস, স্কুল, কলেজে মোড়া জনবহুল এই বোলপুর শহর আজ থেকে দেড়শো বছর আগেও ধুধু প্রান্তর ছিল।

Advertisement

লাল মাটির এই প্রান্তরকে নতুন জীবন দিয়েছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রায়পুরের সিংহবাড়ির কাছ থেকে নামমাত্র অর্থে জমি কিনে সেই জমিতে ব্রাহ্ম উপাসনার জন্য শান্তিনিকেতন গৃহ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই বোলপুর শহরকে এক নতুন রূপ দিলেন তিনি। আর তাকেই পূর্ণাঙ্গ অবয়ব প্রদান করলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথমে ব্রহ্ম চর্যাশ্রম এবং পরে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করলেন রবীন্দ্রনাথ। আর সেখান থেকেই ধীরে ধীরে আজকের চেহারায় বিবর্তিত হতে শুরু করল বোলপুর।

তবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার অনেক আগেই বোলপুরের নাম উঠেছে ইতিহাসের পাতায়। বোলপুরের উল্লেখ রয়েছে প্রাচীন পুরাণে। পুরাণ মতে রাজা সুরথ অর্থাৎ যিনি কিনা মর্ত্যে প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন ঘটান, তাঁর রাজ্যের রাজধানী ছিল বোলপুর সংলগ্ন সুপুর এলাকায়। সেখানেই কোনও এক বছর (মতান্তরে প্রতি বছর) কয়েক লক্ষ ছাগবলি দেওয়া হয় দুর্গাপুজোর সন্ধিক্ষণে। সেই বলির রক্তে ভেসে যেত চার পাশ। একটি বিশেষ স্থানে বাঁধ দিয়ে সেই রক্তস্রোত আটকানো হত। এই বলি থেকেই সংলগ্ন অঞ্চলের নাম হয় বলিপুর বা অধুনা বোলপুর, আর যে স্থানে ওই বাঁধ নির্মিত হয়েছিল, তাই হল আজকের বাঁধগোড়া।

Advertisement
আরও পড়ুন:
আরও পড়ুন:

এ বার পুরাণ থেকে ইতিহাসে ফেরা যাক। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মুঘল আমল বা তারও আগে থেকেই লোহা ও লাক্ষা শিল্পের জন্য দূরদূরান্তে বোলপুরের নাম ছড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে এর সঙ্গে যুক্ত হয় নীল চাষের খ্যাতি। ভারতবর্ষে বিদেশি শাসকদের অনুপ্রবেশের কিছু পরেই তাদের নজর পড়ে এই এলাকার উপরেও। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স দুই দেশের শাসকই ব্যবসার প্রয়োজনে বোলুপুরে আসেন। ১৭৮২ সালে বোলপুরে আসেন ইংরেজ ব্যবসায়ী জন চিপ। যার নামে আজও বোলপুরের উপকণ্ঠেই রয়েছে চিপকুঠি। ওই অঞ্চলেই তখন কাছাকাছি দু’টি কুঠিবাড়ি নির্মাণ করা হয়, যার একটি থেকে চিপ সাহেব অন্যটি থেকে ফরাসি ব্যবসায়ী মনলি সিনর ব্যবসা পরিচালনা করতেন। পরবর্তীতে এই মনলির কুঠি বিশ্বভারতী অধিগ্রহণ করে নেয়।

ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনেরও বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই শহরের সঙ্গে। বঙ্গভঙ্গের সময় বয়কট ও স্বদেশির পক্ষে প্রচার চালিয়ে একে একে জেলার কংগ্রেস নেতৃত্ব গ্রেফতারও হয়েছেন। তবে, ১৯১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গাঁধীজি প্রথম বোলপুরে পা রাখেন। তাতেই জোয়ার লাগে সেই আন্দোলন। এখানকার ছাত্র আন্দোলন থেকেই দেশ জুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা করেন তিনি। তাঁর আহ্বানে হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজ ও বেণীমাধব স্কুলের ছাত্ররা রাস্তায় নামে। ঢেউ লাগে শান্তিনিকেতনের ছাত্রমহলেও।

এর পর ধীরে ধীরে গ্রাম থেকে গঞ্জ থেকে শহরের রূপ নিতে থাকে বোলপুর। বীরভূম জেলার প্রথম রেল স্টেশন নির্মিত হয় এখানেই, আর তাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে থাকে জনবসতি, অফিস, কাছারি ও অন্যান্য পরিষেবা। আর এই উন্নয়নের পথে প্রবল গতির সঞ্চার করে বিশ্বভারতী। তবে বার বার বিভিন্ন মহলে এই তর্ক উঠে আসে যে, বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা না হলে আজ যে পরিচিতি ও সুযোগসুবিধা বোলপুর পাচ্ছে, তা কি পেত? এই বক্তব্য হয়তো অনেকাংশে সত্যি। বিশ্বভারতীকে কেন্দ্র করে দেশ বিদেশের পড়ুয়াদের বোলপুরে আগমন এবং পৃথিবীর নানা কোনা থেকে পর্যটকদের আগমন থেকেই বোলপুরের জনপ্রিয়তার পিছনে বিশ্বভারতীর অবদান বুঝতে পারা যায়। কিন্তু একই সঙ্গে এ-ও ঠিক যে, বিশ্বভারতীকে নিজের মতো করে বিকশিত হওয়ার যে সুযোগ বোলপুর শহর দিয়েছে, তা অন্য কোনও শহরের পক্ষে হয়তো দেওয়া সম্ভবই নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement