স্টেম সেল থেরাপিতে সুস্থ জীবনে ফিরল আকাশ

আকাশের পরিজনেরা জানান, রামপুরহাটের কাছে কালিডাঙায় একটি মিশনারি হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয় তার। চিকিৎসকেরা প্রথমে জানিয়েছিলেন, স্নায়ুর সমস্যা রয়েছে আকাশের। নিউরোসার্জেনের কাছে তিন মাস চিকিৎসা করার পরেও ছেলের স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে না দেখে বেঙ্গালুরু ও পরে হরিদ্বারেও চিকিৎসা চলেও। কিন্তু দিনের পর দিন অবনতিই ঘটছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৮ ০৭:৪০
Share:

সাফল্য: রামপুরহাটে। নিজস্ব চিত্র

সাত বছরের সুস্থ ছেলে। সব কিছু করত নিজেই। হঠাৎ বদলাল সব কিছুই। রামপুরহাট থানার গুগ গ্রামে বাড়ি আকাশ সেনের। এখন বয়স ১৪ বছর। সাত বছর ধরে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে হারিয়েছিল হাঁটাচলা, অন্য কাজের ক্ষমতা।

Advertisement

চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, ‘মাসকুলার ডিস্ট্রফি’ হয়েছে তার। অর্থাৎ দেহের কয়েকটি পেশি ক্রমে হারাচ্ছে তাদের শক্তি।

শুরু থেকে ছেলের অনেক চিকিৎসা করিয়েছিলেন স্বরূপ সেন, রাখীদেবী। তাঁরা জানান, সাত বছর বয়সের আগে আকাশ ভাল ভাবেই হাঁটাচলা করত, স্কুলে যেত, নিজে স্নান করত, খেতও নিজেই। কিন্তু এক দিন দেখা যায়, মাটিতে হাত দিয়ে ভর দেওয়ার পরে তবেই দাঁড়াতে পারছে। মাঝেমধ্যে একা দাঁড়াতে গিয়ে মাটিতে পড়েও যেত সে।

Advertisement

আকাশের পরিজনেরা জানান, রামপুরহাটের কাছে কালিডাঙায় একটি মিশনারি হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয় তার। চিকিৎসকেরা প্রথমে জানিয়েছিলেন, স্নায়ুর সমস্যা রয়েছে আকাশের। নিউরোসার্জেনের কাছে তিন মাস চিকিৎসা করার পরেও ছেলের স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে না দেখে বেঙ্গালুরু ও পরে হরিদ্বারেও চিকিৎসা চলেও। কিন্তু দিনের পর দিন অবনতিই ঘটছিল। কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত অসার হতে থাকে। রাখীদেবী জানান, ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কলকাতা, জামশেদপুর সহ নানা জায়গায় ঘুরে কখনও হোমিওপ্যাথি, কখনও বা এ্যালোপাথি চিকিৎসা করানো হয় আকাশের।

২০১৮ সালে জানুয়ারি মাসে কলকাতায় নিউরোসার্জেনদের একটি শিবিরে আকাশের ‘মাসকুলার ডিস্ট্রফি’ ধরা পড়ে। শিবিরে পরীক্ষার পরে আকাশের ‘স্টেম সেল থেরাপি’ শুরু হয় নভি মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। গত ছ’মাস সেখানেই ছিল আকাশের। রাখীদেবী জানান, এখন অনেকটা সুস্থ তাঁর ছেলে। নিজেই হাঁটতে পারছে, স্নান করছে, লিখতেও।

আকাশের চিকিৎসার সাফল্যের কথা জানাতে বৃহস্পতিবার তারাপীঠে এসেছিলেন নভি মুম্বইয়ের ‘নিউরোজেন ব্রেন অ্যান্ড স্পাইন ইনস্টিটিউটের সার্জিক্যাল বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রিচা বেনসড জানান, ‘স্টেম সেল থেরাপি’র মাধ্যমে আকাশ এখন অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। তিনি আরও জানান, ১৯ অগস্ট কলকাতায় মাসকুলার ডিস্ট্রফি নিয়ে স্বাস্থ্য শিবিরে বিনা খরচে অনেকে চিকিৎসার সুযোগ পেতে পারেন।

স্বরূপবাবু জানান, ছেলের চিকিৎসা করাতে ২ বিঘা জমি বিক্রি করেছেন। নভি মুম্বইয়ের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার প্যাকেজ ছিল। তাঁদের আর্থিক পরিস্থিতি দেখে ৭০ হাজার টাকা ছাড় দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement