সুবলচন্দ্র মুর্মুকে শ্রদ্ধা। হিড়বাঁধ থানার চাকাডোবায়। নিজস্ব চিত্র।
সদ্য বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরেছিলেন। এক মাস পেরোতেই বাড়ি ফিরলেন তিনি, তবে কফিনবন্দি হয়ে। শ্রীনগরের হজরতবালের কর্মস্থলে মৃত সুবলচন্দ্র মুর্মুর (৫৫) দেহ শুক্রবার সকালে তাঁর বাড়ি বাঁকুড়া জেলার হিড়বাঁধ থানার চাকাডোবায় আসে। পৌঁছে দেন সিআরপি জওয়ান ও হিড়বাঁধের পুলিশ কর্মীরা।
গ্রামে আসা সিআরপি জওয়ান ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীনগরের হজরতবালে সিআরপি-র ১১৫ নম্বর ব্যাটালিয়নে কর্মরত সুবলবাবু বুধবার প্রবল তুষারপাতের মধ্যে দুর্ঘটনায় মারা যান। এসডিপিও (খাতড়া) কাশিনাথ মিস্ত্রি বলেন, ‘‘যে সিআরপিএফ জওয়ানেরা এসেছিলেন, তাঁরা জানিয়েছেন, তুষারপাতের কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই জওয়ানের। তবে সিআরপি-র তরফে লিখিত ভাবে কিছু জানানো হয়নি।’’ তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে দমদম বিমানবন্দরে সুবলবাবুর দেহ এসে পৌঁছয়। সেখানে থেকে সিআরপি-র ১৬৭ নম্বর ব্যাটালিয়ন দেহ গ্রহণ করে। সেখান থেকে দুর্গাপুর ও বাঁকুড়ার সেরেঙ্গসগড়ার ১৬৯ ব্যাটালিয়নের জওয়ানেরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ দিন বাড়িতে দেহ পৌঁছয়।
সেখানে ক্লাবের সামনে মৃত জওয়ানকে শ্রদ্ধা জানান সিআরপি জওয়ান ও পুলিশকর্মীরা। ছিলেন এসডিপিও (খাতড়া)। পরে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বাড়ি থেকে প্রায় আড়াইশো মিটার দূরে সুবলবাবুর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
গ্রামের বাড়ি চাকাডোবায় হলেও সুবলবাবুর পরিবার বর্তমানে খাতড়ার জীবনপুরে থাকেন। সেখানে থাকেন সুবলবাবুর বৃদ্ধা মা রসমণিদেবী, স্ত্রী মাধবীদেবী, ছেলে সৌমেন ও মেয়ে মৌসুমী। সৌমেন চাষবাস করেন। মৌসুমী প্রাথমিক শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
সৌমেন জানান, ৫ নভেম্বর তাঁর বাবা এক মাসের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। ৫ ডিসেম্বর তিনি কর্মস্থলে ফেরেন। তিনি বলেন ‘‘প্রতিদিন সকাল ৬টা নাগাদ বাবা ফোন করে বাড়ির সবার খোঁজখবর নিত। বুধবারও সকালে ফোন করে বাবা সবার খোঁজ নেয়। কিন্তু তার পরে যে এমন দুর্ঘটনা ঘটবে, ভাবতে পারিনি। ওই দিন বেলা সওয়া ১১টায় হজরতবালের সিআরপি শিবির থেকে ফোন করে জানানো হয়, বিশ্রাম করার সময় বরফ চাপা পড়ে বাবার মৃত্যু হয়েছে।’’
সে খবর ছড়িয়ে পড়তেই খাতড়ার সঙ্গে হিড়বাঁধের চাকাডোবায় শোক নেমে আসে। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সুবলবাবুর দেহ গ্রামে পৌঁছতেই স্থানীয় পাঁচ-সাতশো লোকজন সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন।
গ্রামবাসীর মধ্যে স্বরূপ টুডু, আশ্বিন হাঁসদা বলেন, ‘‘সুবলবাবু খুব ভাল মানুষ ছিলেন। ১২-১৩ বছর আগে খাতড়ায় বাড়ি করে সেখানে উঠে গেলেও, ছুটিতে এলে তিনি গ্রামে আসতেন। সবার খোঁজখবর নিতেন। উনি যে এ ভাবে মারা যাবেন, ভাবতে পারছি না!’’