সিউড়ি জেলা হাসপাতালে সেই মেশিন। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রস্তুতি সারা। সিউড়ি জেলা হাসপাতালে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ (ব্লাড কম্পোনেন্ট সেপারেশন) ইউনিট চালু হওয়া এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে হাসপাতালের ব্ল্যাড ব্যাঙ্কে এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বসে গিয়েছে। পরিকাঠামো তৈরি। তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল পরিদর্শনও করে গিয়েছে গত ১২ নভেম্বর। এখন অনুমোদন পাওয়া বাকি। অনুমোদন পেলে, এটিই হবে জেলার প্রথম রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ ব্যবস্থা। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি বলেন, ‘‘আশা করি দ্রুত অনুমোদন মিলবে। এই ইউনিট চালু হলে তা রোগীদের খুবই উপকারে লাগবে। হয়রানি ও রক্তের অপচয় বন্ধ হবে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন অসুস্থতার জন্য এক জন রোগীর রক্তের একটি বা দু’টি উপাদন প্রয়োজন হতে পারে। তাঁকে ‘হোল ব্ল্যাড’ বা সব উপাদানযুক্ত রক্ত দিলে তাতে অনেক সময়েই নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা তৈরি করতে পারে। রোগীকে ‘হোল ব্ল্যাড’ দিলে রক্তের অপচয় হয় বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। কারণ, রক্তের উপাদান ভাগ করে ব্যবহার করলে এক ইউনিট রক্ত অন্তত তিন জন রোগীর চিকিৎসার কাজে লাগতে পারে। ‘হোল ব্লাড’ হলে তা সম্ভব নয়। রক্তদাদাতদের কাছ থেকে রক্ত নেওয়ার পরে, লোহিত কণিকা বা রেড ব্লাড সেল, প্লাজ়মা বা রক্তরস, প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা এবং ক্রায়োপ্রেসিপিটেট—মূলত রক্তের এই চারটি উপাদন পৃথক করা হয়।
এই পরিষেবার জন্য এত দিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের উপর নির্ভর করতে হত। এ বার সিউড়ি জেলা হাসপাতালে এই পরিষেবা চালু হলে রোগীদের হয়রানি অনেক কমবে। জেলা হাসপাতালের সুপার শোভন দে বলছেন, ‘‘ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলে, তাঁকে প্লেটলেট দিতে হয়। হোল ব্লাড দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আবার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের জন্য লোহিত কণিকা প্রয়োজন। পুড়ে যাওয়া রোগীর ক্ষেত্রে প্রয়োজন প্লাজমা। উপাদনগুলিকে আলাদা করার ব্যবস্থা থাকলে প্রয়োজন অনুয়ায়ী সেগুলি রোগীকে দেওয়া যায়। অর্থাৎ, যাঁর যেটা প্রয়োজন। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’
প্রতি বছর জেলা হাসপাতালে সাড়ে নয় হাজার থেকে দশ হাজার ইউনিট রক্ত লাগে। কিন্তু উপাদান ভাগ করার পরিকাঠামো না-থাকায় এত দিন রোগীরা ‘হোল ব্লাড’ নিতে বাধ্য হতেন। নতুবা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে রক্তের উপাদান আনার অপেক্ষা করতে হত। রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ ইউনিট চালু জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ইউনিটের ছাড়পত্র দেয় ‘সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন’। রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের জন্য কেমন পরিকাঠামো গড়েছে জেলা হাসপাতাল, সেটাই গত ১২ তারিখ সরেজমিনে দেখে গিয়েছেন দিল্লি থেকে এক জন ও রাজ্যের দু’জন। সব দেখে তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেছন। সিএমওএইচ জানান, অনুমোদন মিললেই স্বাস্থ্য ভবন থেকে ওই ইউনিটের জন্য কর্মীও দেওয়া হবে।