রানিবাঁধে বিদ্যুৎ দাসের ফ্লেক্স খুলে জ্বালিয়ে দেওয়া হল। —নিজস্ব চিত্র
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের পরে, এ বার রানিবাঁধ। তৃণমূল থেকে তাঁদের দলে যোগ দেওয়া নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ থামছে না।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন যুব তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সহ-সভাপতি তথা রানিবাঁধের বাসিন্দা বিদ্যুৎ দাস। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আগেই তাঁকে তৃণমূল বহিষ্কার করেছিল। বিদ্যুতের বিজেপিতে যোগদানের খবরে ফেটে পড়েন রানিবাঁধের বিজেপির নিচুতলার কর্মী থেকে স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ। অভিযোগ, প্রতিবাদ জানাতে এ দিন রানিবাঁধ বাজারে রাস্তার উপরে বিদ্যুতের ছবি দেওয়া ফ্লেক্স খুলে জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের একাংশ। তাঁকে অবিলম্বে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিও তোলা হয়। গোটা ঘটনায় অস্বস্তি দানা বেধেছে জেলা বিজেপি শিবিরে।
বিষয়টি নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “ওই নেতা কার মাধ্যমে দলে ঢুকেছেন জানি না। আমি বাঁকুড়ার নেতৃত্বের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।” বিদ্যুতের অবশ্য দাবি, “তৃণমূলের উস্কানিতেই এই ঘটনা ঘটেছে।” যদিও রানিবাঁধ ব্লক তৃণমূল সভাপতি চিত্তরঞ্জন মাহাতোর দাবি, “এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ নেই। বিজেপিতে যোগ দিতে গিয়ে ফাঁপরে পড়ে এখন ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছেন তিনি।’’
বিজেপিতে বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় যোগ দেওয়ার পরে সেখানকার দলীয় কর্মীরাও তাঁর বিরোধিতায় পথে নেমেছিলেন। তবে সম্প্রতি বিজেপির বিষ্ণুপুর পাটি অফিসে তাঁকে ডাকা হয়। কিন্তু রানিবাঁধে বিদ্যুৎকে নিয়ে বিজেপি কর্মীদের ক্ষোভ কেন?
বিক্ষোভকারী বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রানিবাঁধ ব্লক অফিসে মনোনয়নপত্র জমা করতে যাওয়ার পথে তৃণমূলের লোকজন তাঁদের কর্মীদের উপরে হামলা চালায়। ওই হামলায় খুন হন রানিবাঁধের পুনষ্যা গ্রামের যুবক বিজেপি কর্মী অজিত মুর্মু। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তৎকালীন যুব তৃণমূল নেতা বিদ্যুতের নেতৃত্বেই সে দিন বিজেপি কর্মীদের উপর হামলা চালানো হয়েছিল। এ দিন বিজেপি কর্মীরা বিদ্যুতের বিরুদ্ধে ‘খুনি’ অভিযোগ তুলে স্লোগান দেন। যদিও প্রথম থেকেই সেই অভিযোগ অস্বীকার করছেন বিদ্যুৎ। বিজেপির আরও অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই নেতা বুথ লুঠের চেষ্টা করেছিলেন। সে অভিযোগও অস্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ।
তৃণমূলে থাকাকালীন দলের জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে একাধিক বার বিতর্কিত মন্তব্য করে দলের বিরাগভাজন হন বিদ্যুৎ। তাঁকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ডিসেম্বরে মেদিনীপুরে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভায় বিজেপিতে যোগ দেন খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি জয়ন্ত মিত্র। বিদ্যুৎও বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে এলাকায় গুঞ্জন দানা বাধে। ডিসেম্বরে বিজেপির রাঢ়বঙ্গের পর্যবেক্ষক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় খাতড়ায় কর্মসূচিতে এলে তাঁর কাছে বিজেপির কর্মীদের বড় অংশ দাবি করেন, অজিত মুর্মু খুনে জড়িতদের দলে নেওয়া যাবে না। বিষয়টি নিয়ে দলের কর্মীদের ক্ষোভের মুখেও পড়েন রাজুবাবু। তার পরেও বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ কলকাতায় গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি কর্মীরা।
অভিযোগ, এ দিন রানিবাঁধ বাজারেই বিদ্যুতের ছবি দেওয়া ফ্লেক্স নানা জায়গা থেকে খুলে এনে রাস্তায় ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা। পুনষ্যা গ্রামেও বিক্ষোভ হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অজিতবাবুর স্ত্রী ঊর্মিলাদেবী। তিনি দাবি করেন, “আমার স্বামীকে যে খুন করেছে, তাকে কোনও ভাবেই বিজেপি দলে দেখতে চাই না। ওই নেতাকে বহিষ্কার করা না হলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।” সোমবার রানিবাঁধে বিজেপি কার্যালয়ের সামনে ধর্না-বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা। সেখানে ঊর্মিলাদেবীও উপস্থিত থাকবেন বলে জানান। বিক্ষুব্ধ এক বিজেপি কর্মী বলেন, “যাদের হাতে আমাদের কর্মীর রক্ত লেগে রয়েছে, যাঁরা এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়ে এসেছে, তাদের সঙ্গে নিয়ে মানুষের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোট চাইতে আমরা পারব না। যে লোকগুলোর কাণ্ডকারখানার জন্য এলাকায় তৃণমূলের প্রতি মানুষ বিক্ষুব্ধ, আজ তাঁরাই আমাদের দলে আসছেন। এ ভাবে তো আমাদের দলেরই জনসমর্থন কমে যাচ্ছে।”
বিজেপির রাঢ়বঙ্গের পর্যবেক্ষক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন ফোনে বলেন, “রানিবাঁধে কী হয়েছে, আমার জানা নেই। সেখানকার দলীয় কর্মীদের দাবিদাওয়া আগেই রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছিলাম।” বিদ্যুৎ এ দিনও দাবি করেন, “অজিত মুর্মু খুনে আমি জড়িত নই। এ সব মিথ্যা অভিযোগ। পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত করছে। সেই তদন্তেই প্রকৃত দোষীরা ধরা পড়বে।” তাঁর দাবি, “আমার ভাবমূর্তি এলাকায় যথেষ্ট ভাল। বিজেপির রাজ্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই ওই দলে যোগ দিয়েছি।”