প্রতীকী ছবি
বাড়িতে নাবালিকা পরিচারিকাকে দিয়ে কাজ করানো ও তার উপরে শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগে এক বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
পুরুলিয়ার হুড়ার নোয়ডি গ্রামের বাসিন্দা ধৃত নেতা সুব্রত দাস বিজেপির একটি মণ্ডলের সভাপতি। রবিবার সন্ধ্যায় তাঁকে বাড়ি থেকে গ্রেফতারের পরে, সোমবার পুরুলিয়া আদালতে তোলা হয়েছিল। বিচারক ধৃতের চোদ্দো দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুরো ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ধৃতের বাবা মদন দাস। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে বিজেপির নেতা বলেই তৃণমূলের নির্দেশে ওকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে পুলিশ।” তবে পুলিশের দাবি, ওই নাবালিকাকে উদ্ধারের পরে, স্থানীয় এক ব্যক্তি ঘটনার বিষয়ে বিশদে জানিয়ে হুড়া থানায় সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তার পরেই নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে সুব্রতবাবুকে গ্রেফতার করা হয়।
কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়াও বলেন, ‘‘বিজেপির লোকজনের ধরনই হচ্ছে অনৈতিক এবং অবৈধ কাজ করা। নাবালিকাকে দিয়ে পরিচারিকার কাজ করানো শুধু হয়, তাকে নির্যাতন করা হত। সেই কথা মেয়েটিই স্থানীয় লোকজনকে জানিয়েছে। এলাকার লোকজন পুলিশে গিয়েছেন। এখানে রাজনীতি আসছে কোথা থেকে?’’
বছর এগারোর ওই নাবালিকাকে উদ্ধারের পরে, রবিবার তাকে পুলিশ তুলে দিয়েছিল পুরুলিয়ার ‘চাইল্ডলাইন’-এর হাতে। ‘চাইল্ড লাইন’-এর পুরুলিয়ার কো-অর্ডিনেটার অশোক মাহাতো বলেন, ‘‘শিশু কল্যাণ সমিতির মৌখিক নির্দেশে তাকে আপাতত রাখা হয়েছে পুরুলিয়ার একটি হোমে। উদ্ধারের পরে মেয়েটি জানায়, তার কানে ব্যথা আছে। ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কথা বলে মনে হচ্ছে, মেয়েটি আতঙ্কে রয়েছে।’’ এ দিনই পুরুলিয়া আদালতে ওই নাবালিকার গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় হুড়া থানা এলাকারই ওই নাবালিকাকে একা বসে কান্নাকাটি করতে দেখেছিলেন স্থানীয় কিছু লোকজন। তাঁরাই নাবালিকার সঙ্গে কথাবর্তা বলে খবর দেন হুড়া থানার পুলিশকে। পুলিশের দাবি, নাবলিকাকে উদ্ধারের পরে, কথাবার্তা বলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কথা জানা যায়।
এ দিন সুব্রতবাবুর বাবা, পেশায় শিক্ষক মদনবাবুর অবশ্য দাবি, ওই মেয়েটি আদৌ তাঁদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করত না। তিনি জানান, সুব্রতবাবুর শ্বশুরবাড়ি দুর্গাপুরে। বৌমার পড়শির মেয়ে ওই নাবালিকা। মদনবাবু বলেন, ‘‘দিন আট-নয় আগে বৌমার পড়শিই তার মেয়েকে বলেছিল, এখানে কয়েকদিন কাটিয়ে যেতে। সেই মতো ওকে হুড়াতে নিয়ে এসেছিল বৌমা।” মদনবাবুর আরও দাবি, ওই নাবালিকা প্রায়ই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত। তিনি বলেন, ‘‘শনিবার বিকেলে মেয়েটি বাড়ি থেকে পালায়। খোঁজ করে তাকে লক্ষ্মণপুরে পেয়েছিলাম। কিন্তু তৃণমূলের লোকজন ততক্ষণে মেয়েটিকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে দিয়েছিল।”
যে ব্যক্তি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন, তিনি তৃণমূল কর্মী হিসাবে এলাকায় পরিচিত। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘আমাদের এক কর্মীই মেয়েটিকে প্রথম মাঠে বসে কাঁদতে দেখেন। মেয়েটি তাঁকে যা জানিয়েছে, তিনি সেটাই শুধু পুলিশকে বলেছেন।’’ ঘটনায় রাজনৈতিক রঙ চড়ানোর পাল্টা অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে তুলেছেন তিনি।