মন্দিরের কারুকার্য দেখছেন পর্যটকেরা । বিষ্ণুপুরের শ্যামরাই মন্দিরে । ছবিঃ অভিজিৎ অধিকারী।
দুর্গাপুজোর সময়ের জন্য পর্যটকেরা আগাম ঘর ভাড়া না নেওয়ায় মরসুমে ব্যবসা কেমন যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন বিষ্ণুপুরের লজ ও হোটেল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পুজোর মুখেই পর্যটকেরা ঘর ভাড়া নিতে শুরু করতেই হাসি ফেরে ব্যবসায়ীদের মুখে। বেচাকেনা জমে যাওয়ায় উচ্ছ্বসিত বিষ্ণুপুরের হস্তশিল্প ব্যবসায়ীরাও।
করোনা-পর্ব থেকেই বিষ্ণুপুরে পর্যটকদের আনাগোনা আগের থেকে অনেকখানি কমে গিয়েছে। যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অধিকাংশই বিষ্ণুপুর ঘুরে রাত্রিবাসের জন্য চলে গিয়েছেন মুকুটমনিপুর, ঝিলিমিলি, সুতান, শুশুনিয়ায়। এ বারও পুজোর আগে আগাম হোটল ভাড়া নেওয়ার প্রবণতা কম থাকায় উদ্বেগে ছিলেন ব্যবসায়ীরা।
বিষ্ণুপুর লজ ও হোটেল মালিক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক অসিত চন্দ্রের কথায়, ‘‘এখানে কমবেশি ২৮টি বেসরকারি হোটেল ও লজ আছে। গোড়ার দিকে আগাম ঘর ভাড়া নেওয়ার ঝোঁক কম দেখে চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু পুজোর মুখে ফোন করে ঘর ভাড়া করার সংখ্যা বেড়েছে। অনেকে হোটেলে এসে ঘরভাড়া নিয়েছেন। এমন হয়েছে, পুজোর সময় অনেককে ঘর ভাড়া দেওয়া যায়নি।’’ তিনি জানান, শীতের সময়ের জন্যও অনেকে আগাম ঘর ভাড়া করতে শুরু করেছেন। পর্যটক আসায় খুশি মন্দিরের সামনে হস্তশিল্প বিক্রেতা স্বপন দাস, সরমা পাত্র-ও।
সম্প্রতি লক্ষ্মীপুজোর পরে সপ্তাহের মাঝখানেও শ্যামরাই মন্দিরে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। কলকাতা থেকে সপরিবারে এসেছিলেন প্রবোধকুমার ত্রিপাঠী। বিষ্ণুপুরে একদিন কাটিয়ে পরের দিন তাঁর শুশুনিয়া যাওয়ার কথা ছিল। মত পাল্টেছেন তিনি। বলেন, ‘‘ঠিক করেছি, বিষ্ণুপুরে থেকেই বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলি ঘুরে দেখব।’’
পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থেকে এসেছিলেন একটি সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা। ওই কেন্দ্রের শিক্ষক শরবিন্দু রায় বলেন, “আমরা প্রতিবছর বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে যাই। বিষ্ণুপুরের মন্দিরের শিল্পকলা থেকে আমরা মুগ্ধ।’’
সাবেক ‘বিষ্ণুপুর টুরিস্ট লজ’ তথা বর্তমান ‘বিষ্ণুপুর টুরিজ়ম প্রর্পাটি’র ম্যানেজার মুরারীমোহন দাস বলেন , “আমাদের ৩০টি ঘর কোনও দিনই ফাঁকা নেই। অনলাইনে লোকজন ঘর ভাড়া করছেন। আপাতত ১ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনও ঘর খালি নেই।’’ রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের লজ মালিক সুমন্ত দাস জানান, অবশেষে আগেই মতোই বিষ্ণুপুরে রাতে থাকার প্রবণতা বেড়েছে পর্যটকদের। ডিসেম্বর মাসের জন্য তাঁরা বুকিং নিচ্ছেন।
বালুচরি শিল্পী অরুণ দে আশাবাদী, ‘‘গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বার পুজোতে ভাল সংখ্যায় পর্যটক এসেছিলেন। আশাকরি, শীতের মরসুমেও বিক্রিবাটা ভালই হবে।”