রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রার জন্য প্রস্তুতি। রামপুরহাট চলছে ফ্লেক্সে কাঠের ফ্রেম লাগানো। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে। আর ওই দিনই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ ঢুকছে বীরভূমে। সে জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে জেলা কংগ্রেস। কিন্তু, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য রাহুলের যাত্রার অনুমোদন দিল না বীরভূম জেলা পুলিশ। এই অবস্থায় ২ তারিখ কংগ্রেসের কর্মসূচি নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।
বীরভূম জেলা কংগ্রেস সভাপতি মিল্টন রশিদ বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রা সকাল সাড়ে নটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত করা হয়েছে। ওই দিনই মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। সেই কারণে আমরা প্রশাসনের কাছে শুধুমাত্র র্যালির জন্য সমস্ত রকম সহযোগিতার জন্য আবেদন জানিয়েছি।’’ যদিও জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় জানান, প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে থেকে আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশের আপত্তির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য কোনও রকম সভা বা মাইক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘র্যালি হলে মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবে কী করে?’’
অন্য দিকে, মিল্টনের দাবি, কর্মসূচি অনুযায়ী রাহুল গান্ধী শুধুমাত্র গাড়ি নিয়ে র্যালি করবেনন। কোথাও কোথাও নেমে হয়তো মানুষের সঙ্গে হাত মেলাবেন। কিন্তু, কোনও পথসভা করার কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। মাইকও ব্যবহার হবে না। তিনি বলেন, ‘‘কর্মীরা খুব জোর কিছু বাজনা বাজাতে পারে। কিন্তু, যাত্রাপথে মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র তার ১ কিলোমিটার দূর থেকে কর্মীরা চুপচাপ থেকে কোনও রকম আওয়াজ না করে রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’’
মঙ্গলবার বিহারে রয়েছে রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রা। আজ, বুধবার ফের তিনি বাংলায় পা রাখবেন। এ বারে মালদহ হয়ে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের দিকে এগোবেন রাহুল। মুর্শিদাবাদের পরে বীরভূমে ২ তারিখ তাঁর যাত্রা ঢোকার কথা। জেলা কংগ্রেস সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম, এড়োয়ালি, আওগ্রাম, পারুলিয়া, মাঝিপাড়া মোড় হয়ে বীরভূমের তারাপীঠ থানার বুধিগ্রামে পৌঁছনোর কথা কংগ্রেস সাংসদের।
মিল্টন জানান, সাত দিন আগে বীরভূম জেলায় র্যালি নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস থেকে রাজ্য পুলিশের ডিআইজি, আইজির কাছে সমস্ত রকম সহযোগিতা চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। সোমবার জেলা পুলিশ সুপার এবং রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রার বার্তা জনগণের কাছে দিতে চাইছি। প্রশাসনের সঙ্গে কোনও রকম দ্বন্দ্বে আমরা যেতে চাই না।’’
মিল্টন যাই বলুন না কেন, মাধ্যমিকের দিন পরীক্ষা শুরুর সময়ে এত বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি হবে কী করে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেসও। জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক তথা সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর মতে, পরীক্ষার্থীরা জীবনে প্রথম বড় পরীক্ষায় বসছে। সব রাজনৈতিক দলের এ ব্যাপারে তাদের পাশে থাকা উচিত। বিকাশের কটাক্ষ, ‘‘আসলে ওরা (কংগ্রেস) তো হঠাৎ হঠাৎ জেগে ওঠে! সারা বছর দলটা করে না।’’
রাহুলের সফর ঘিরে সংশয় দেখা দিলেও জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। জেলায় প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে। জায়গায় জায়গায় বিশেষ করে রামপুরহাট শহরের জনবহুল মোড়ে রাহুলের ন্যায় যাত্রার ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে। মিল্টন জানান, ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ভোল্লা ক্যানাল মোড় পেরিয়ে একটি বেসরকারি স্কুলের সামনে রাহুল এবং কর্মীদের দুপুরের খাবারের জন্য ক্যাম্প করা হবে।
প্রস্তুতি যতই থাক, পুলিশ অনুমোদন না-দেওয়ায় বীরভূমে ন্যায় যাত্রা নিয়ে সংশয়ে কংগ্রেসের একাংশও।