বিদ্যুৎ দফতরের জয়েন সেক্রেটারি রঞ্জন চক্রবর্তীর হাতে এই প্রথম ডেউচা পাঁচামি এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য জমি হস্তান্তর করল ব্লক ভূমি সংস্কার দফতর। মহম্মদবাজার ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরে। ছবি: পাপাই বাগদি।
মহম্মদবাজারের ডেউচা পাঁচামিতে প্রস্তাবিত কয়লা খনি গড়ার গড়ায় নোডাল এজেন্সি পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমকে প্রথম ধাপের জমি হস্তান্তর করল বীরভূম জেলা প্রাশসন। মঙ্গলবার দুপুরে এই হস্তান্তরপর্ব চলে মহম্মদবাজার ভূমি ও ভূমি সংস্কার কার্যালয়ে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘আমরা ডেউচা পাঁচামিতে জমি পিডিসিএলকে হস্তান্তর করলাম যাতে পরবর্তী কাজ ওঁরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।’’
এ দিন জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়ার কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন পিডিসিএলের যুগ্ম সচিব রঞ্জন চক্রবর্তী, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জমি অধিগ্রহণ) বাবুলাল মাহাতো, ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সব্যসাচী মণ্ডল প্রমুখ। প্রশাসন জানিয়েছে, হস্তান্তরের আগে জমির নথিপত্র সব প্রস্তুত করা হয়েছিল।
প্রশাসন সূত্রে খবর, খনি গড়ার জন্য কার্যালয়, পুনর্বাসন দেওয়ার মতো এলাকা ধরে তিনটি মৌজায় ৩৭ একরের মতো জমি এ দিন হস্তান্তর করা হয়েছে। পুনর্বাসনের জন্য গণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মৌবেলিয়া মৌজায় ২২.২০ একর, চরিরা গ্রাম পঞ্চায়েতের রঘুবরপুরে ১৩.৬০ একর এবং প্রকল্পের দফতর তৈরির জন্য ১.৬ একর জমি দেওয়া হয়েছে আঙ্গারগড়িয়া মৌজায়
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম ধাপে যে অংশে কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু করার কথা, সেই প্রস্তাবিক এলাকার আনুমানিক ৪৩০ একর জায়গা কয়লা উত্তোলনের জন্য গত নভেম্বরেই ঠিক করছে পিডিসিএল। সে জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হবে সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম তার আগে এলাকায় প্রকল্পের দফতর-সহ অন্য পরিকাঠামো গড়ে তুলতে চায়। সে জন্য অধিগৃহীত জমির একটা অংশের হস্তান্তর প্রক্রিয়া এ দিনই সম্পন্ন হয়েছে।
পাঁচামি দেওয়ানগঞ্জ হরিণশিঙা কোল ব্লকে কোথায়, কত কয়লা, কী অবস্থায় আছে, মাটির কত নীচে আছে জানতে সমীক্ষা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের হয়ে গত বছরে সেই সমীক্ষা করে সেন্ট্রাল মাইন প্ল্যানিংঅ্যান্ড ডিজাইন ইনস্টিটিউট লিমিটেড (সিএমপিডিআইএল)। চূড়ান্ত সমীক্ষার পাশাপাশি কী উপায়ে কয়লা তোলা উচিত তার পরিকল্পনা ও নকশা তৈরির কাজও করে কোল ইন্ডিয়ার শাখা সংস্থা সিএমপিডিআইএল।
সমীক্ষা অনুযায়ী তৈরি করা নকশা কেন্দ্রের খনি সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে দেখে অনুমোদিত হলে কয়লা উত্তোলনের সংস্থা বাছাই ও দরপত্র ডাকার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। জানা গিয়েছে, সিএমপিডিআইএল ইতিবাচক রিপোর্ট দিয়েছে। পরের ধাপ ছিল আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেউচায় পিডিসিএলকে প্রথম দফার জমি হস্তান্তর করার অন্যতম কারণ ইতিমধ্যেই খনি গড়ায় আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হয়েছে।
দু’টি পর্যায়ে এলাকায় সাড়ে তিন হাজার একর জমিতে গড়ে উঠার কথা ডেউচা পাঁচামির প্রস্তাবিত কয়লা খনি। কিন্তু এলাকায় কয়লা খনি গড়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল এলাকায় বসবাসকারী মানুষের আস্থা অর্জন। প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জুড়ে প্রস্তাবিত খনি এলাকায় বসবাসকারী প্রকৃত জমির মালিক, বর্গাদার পাট্টাদার ভূমিহীনদের চিহ্নিত করাও কঠিন ছিল। জমির রেকর্ড ঠিক করার কাজও ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম দিকে বাধা থাকলেও সরকারি পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা ও প্রশাসনের লাগাতার কাজে ইতিমধ্যেই অনেক জমি দাতা সরকারকে জমি দিয়েছেন। চাকরিও পেয়েছেন ১৮০০-র বেশি জমিদাতার পরিবার মনোনীত সদস্যরা। তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অত্যন্ত দায়িত্বপূ্র্ণ ভাবে মানুষের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে তাঁদের আস্থা নিয়ে খনি গড়ার দিকে এগোচ্ছে রাজ্য সরকার। পিডিসিএলকে জমি হস্তান্তর করা তারই অঙ্গ।’’