পর্যবেক্ষণ: জরুরি বিভাগে টেবিল পেতে বহির্বিভাগের রোগীদেরও দেখছেন চিকিৎসকেরা। রামপুরহাট হাসপাতালে। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র
এনআরএস-কাণ্ডের প্রতিবাদে বহির্বিভাগ বন্ধের ডাক দিলেও, সেই পরিষেবা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বসে দিলেন চিকিৎসকেরা। সিউড়ি থেকে রামপুরহাট— সোমবার সেই ছবি দেখা গেল দুই জায়গাতেই। তবে সে খবর না জানায় হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়েও অনেক রোগী ফিরলেন বিনা চিকিৎসাতেই।
সর্বভারতীয় চিকিৎসক সংগঠন আইএমএ-র ডাকে এ দিন দেশ জুড়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে পরিষেবা বন্ধ ছিল। সিউড়ি ও রামপুরহাটের হাসপাতালের বহির্বিভাগ এ দিন ছিল বন্ধ। চিকিৎসা না পেয়ে ফেরার মুখে অনেক রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা বলে গেলেন— ‘‘আমাদের কী অপরাধ?’’ তবে দু’টি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, জরুরি বিভাগ এবং অন্তর্বিভাগের পরিষেবা রয়েছে স্বাভাবিক। কোনও রোগী বহির্বিভাগের টিকিট করিয়ে জরুরি বিভাগে গেলে তাঁদেরও দেখে দেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা। রামপুরহাট হাসপাতালে সে জন্য জরুরি বিভাগে আলাদা টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসেছিলেন অনেক ডাক্তারই।
এ দিন সকাল থেকেই সিউড়ি হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিটঘরের সামনে রোগী ও তাঁদের পরিজনদের লাইন পড়ে। সেখান থেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্যে দেওয়া হয় টিকিট। কিন্তু চিকিৎসকেরা কি আদৌ তাঁদের দেখবেন, তা নিয়ে ঘুরছিল প্রশ্ন। রোগীদের কয়েক জন বলেন, ‘‘টিকিটঘরের কর্মীরা শুধু বলেছিলেন, চিকিৎসক দেখবেন কি না জানি না। টিকিট নিয়ে বহির্বিভাগে গেলে বলা হয়, ডাক্তারবাবু দেখবেন না। ওঁদের ধর্মঘট।’’
তবে সিউড়ি হাসপাতালের সুপার শোভন দে বলেন, ‘‘হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ চালু ছিল। কিছু মানুষের অসুবিধা হয়েছে ঠিকই, তবে যাঁরা বহির্বিভাগের টিকিট করেছেন তাঁরা জরুরি বিভাগে গেলেও চিকিৎসকেরা দেখে দিয়েছেন।’’
সিউড়ি হাসপাতাল সূত্রে খবর, সিউড়ি জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য প্রতি দিন প্রায় সাত-আটশো রোগী আসেন। এ দিন সমস্যায় পড়েন তাঁদের অনেকে।
এ দিন সকালে গনপুর থেকে ছ’বছরের সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন নয়নতারা বিত্তল। বহির্বিভাগে পরিষেবা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন তিনি। পরিষেবা না পেয়ে ফেরেন সদাইপুরের আব্দুল রেজাও। সিউড়ি নতুনপল্লির শীতলা সাধু ঘন্টাখানেক বহির্বিভাগের গেটে বসেছিলেন। পরে তিনি জানতে পারেন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করা হচ্ছে। সেখানে গিয়ে চিকিৎসককে দেখান তিনি। প্রতিবাদে শামিল হয়েও পরিষেবা চালু রাখলেন রামপুরহাট হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও এ দিন বহির্বিভাগ বন্ধ ছিল। সেখানকার রোগীদের চাপ সামলাতে জরুরি বিভাগের সামনে টেবিল-চেয়ার পেতে রোগীদের পরিষেবা দেন তাঁরা। আইএমএ-র রামপুরহাট শাখার সম্পাদক দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘রবিবার আউটডোর বন্ধ থাকে। সোমবার তা খোলা হয়। তা-ই সোমবার ভিড়ও হয় হাসপাতালে। রোগীদের কথা ভেবেই এ দিন চিকিৎসকেরা জরুরি বিভাগের সামনে টেবিল পেতে যতটা সম্ভব পরিষেবা দিয়েছেন।’’