নিমতলার বাসন্তী পুজো। নিজস্ব চিত্র।
মহা সমারোহে শুরু হল বিষ্ণুপুরের নিমতলায় বাসন্তী পুজো। শুক্রবার ‘নবপত্রিকা আগমনে’ দিয়ে শুরু হয় সপ্তমীর পুজোপাঠ। সকালে কৃষ্ণবাঁধ থেকে শোভাযাত্রা সহকারে ঘট এনে পুজোয় বসেন পুরোহিত দুর্গাদাস মুখোপাধ্যায়। তাঁকে সাহায্য করছেন দু’জন। এ বছর ভক্তেরা নিজ হাতে পুজোর কাজ করতে পেরে খুশি।
নিমতলা ষোলোআনার সম্পাদক লালু ঘোষ বলেন, “করোনা-পরিস্থিতিতে নামমাত্র পুজো হয়েছিল। মনে কারও আনন্দ ছিল না। এ বার প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে পুজো হচ্ছে।’’ মল্লরাজ আমলে শুরু হওয়া বাসন্তী পুজো বিষ্ণুপুরের অন্যতম উৎসব। ‘রাজমান্য’ দিয়ে পুজো শুরু হয়। এলাকার প্রায় ৩০০ পরিবার মেলাপ্রাঙ্গণে এসে পুজোর অনুদান দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান লালু। তবে, কমিটির আক্ষেপ, দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদান মিললেও ৩০০ বছরের প্রাচীন এই পুজো সরকারি অনুদানের আওতার বাইরে থেকে গিয়েছে।
চার দিনের পুজোয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। দশমী ও ‘মধ্যম বিজয়া’য় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বেশ ভিড় টানে। কমিটির সভাপতি বিদ্যুৎ রায় বলেন, “সপ্তমী পুজো শুরুর আগে স্থানীয় মহিলারা কৃষ্ণবাঁধ থেকে ঘট ভরে জল আনেন। প্রতিদিন দু’টি করে তোপধ্বনি দেওয়ার রেওয়াজ আছে। এ বছর কাপড়ের মণ্ডপ, আলো ও বাদ্যযন্ত্র— সবই করা হয়েছে আগের মতো। পুজোর দিনগুলি ভক্তদের সাহায্যে থাকবেন কমিটির লোকজন।’’
মন্দিরের পুরোহিত বলেন, “সন্ধিক্ষণে প্রথা অনুযায়ী তিনটি তোপধ্বনি দেওয়া হয়। প্রতিদিন ফল-মিষ্টি থাকলেও অষ্টমীর দিন দুধ-লুচির ব্যবস্থা থাকে। পাশের সব জেলা থেকেও ভক্তেরা আসেন পুজো দিতে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দোলের দিন নিমতলার বাসন্তী প্রতিমা তৈরি শুরু হয়। সারা বছর ধরে এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পুজোর জন্য অপেক্ষায় থাকেন। প্রায় তিনশো পরিবার পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত। পুজো উপলক্ষে বাড়ি-বাড়ি আত্মীয়সজন আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা তাপস পাল, দীনবন্ধু গরাই, শুভজিৎ দত্ত, পুজা পাল, পম্পা সূত্রধর ও রীতা রায়ের মতো স্থানীয় অনেকে বলছেন, “গত দু’বছর প্রাণ ভরে পুজো দিতে পারিনি। পুজোর সময়ে ঘর ফাঁকা ছিল। এ বার মা শান্তি এনে দিয়েছেন।” বর্ধমানের ছোট নীলপুর থেকে আসা সুতপা পাল বলেন, “গত দু’বছর করোনার জন্য পুজো দিতে আসতে পারিনি। এ বার মন ভরে পুজো দেব।”