প্রতীকী ছবি।
এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ঘিরে ধুন্ধুমার বাধল বান্দোয়ানে। থানা থেকে মেরেকেটে দু’শো মিটার দূরে একটি ওষুধের দোকান ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দিল উত্তেজিত জনতা। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা। অভিযোগের ভিত্তিতে দোকানের অন্যতম মালিক অনুপম হালদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে অনুপমের দাদা দাবি করছেন, তাঁর ভাইকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। শারীরিক পরীক্ষার জন্য অভিযোগকারিণীকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার বিকেলে। ওষুধের দোকানটি বান্দোয়ানের চৌমাথায়। সেখানে মাঝেমধ্যে এক ডাক্তারও বসেন। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়া ওই ছাত্রীর মায়ের দাবি, মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে দোকানটিতে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবে বলে ওই যুবক তরুণীকে ডেকে নেয়। কিছুক্ষণ পরেই সে চিৎকার করে ছুটে বেরিয়ে আসে। জানায়, শ্লীলতাহানি করা হয়েছে।
জনজাতির এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে— এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই দোকানের সামনে ভিড় করে উত্তেজিত জনতা। অভিযুক্ত এলাকা ছাড়েন। দোকানে ছিলেন তাঁর দাদা। তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। অনুপমের দাদা বলেন, ‘‘সব লুট করে পুলিশের সামনেই আগুন ধরিয়ে দিল। বিস্তর টাকার ক্ষতি হয়েছে।’’ তবে বান্দোয়ান থানার দাবি, ঘটনার সময়ে পুলিশকর্মীরাই গিয়ে তাঁকে রক্ষা করেছেন। পরে বাড়ি থেকে ধরা হয় অভিযুক্তকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার কথা জানাজানি হতেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে প্রচুর পুরুষ ও মহিলা চৌমাথায় জড়ো হতে শুরু করেন। অনেক দোকানদার ঝাঁপ ফেলে চলে যান।
শুক্রবার গিয়ে দেখা গেল, ওই এলাকার কয়েকটি দোকান খোলেনি। ওষুধের দোকানে আসবাব ও অন্য জিনিসপত্র পুড়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দমকল এসে আগুন আয়ত্তে আনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
জনজাতির ছাত্রীকে নিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। শুক্রবার দুপুরে বান্দোয়ানের চৌমাথায় সংগঠনের তরফে বিক্ষোভ অবস্থান হয়। আটকে পড়ে গাড়িঘোড়া।
বান্দোয়ানের বাসিন্দা তথা সংগঠনটির স্থানীয় নেতা সূর্যকান্ত মুর্মু বলেন, ‘‘আমরা অভিযুক্ত যুবকের কঠোর শাস্তি চাই। তবে ভাঙচুরে আমাদের কেউ জড়িত নয়। ক্ষুব্ধ জনতাই ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে।’’ আর এক আদিবাসী নেতা কলেন্দ্রনাথ মান্ডি বলেন, ‘‘অভিযুক্ত যেন আইনের ফাঁক গলে পার না পায় আমরা প্রশাসনকে সেটাই দেখতে বলব।’’
জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় স্তরে আলোচনা চালানো হচ্ছে। জনজীবন স্বাভাবিক রাখার জন্যে সব রকম ভাবে আমরা উদ্যোগী।’’