সিউড়ির প্রশাসনিক বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
জেলার যে-সব পঞ্চায়েতে প্রত্যাশিত কাজ হয়নি, সেগুলির নির্মাণ সহায়কদের কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরত্বের পঞ্চায়েতে বদলি করার হুঁশিয়ারি দিলেন স্টেট রুরাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বা এসআরডিএ-র চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল। সোমবার সিউড়ি রবীন্দ্রসদনে আয়োজিত উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রশাসনিক বৈঠক থেকে অনুব্রত সরাসরি জেলার এক বিডিও-র বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার হঁশিয়ারি দেন।
কোন কোন গ্রাম পঞ্চায়েত চতুর্দশ অর্থ কমিশনের টাকা ঠিকমতো খরচ করতে পারেনি, কোন কোন পঞ্চায়েত বছরে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে কর্মদিবস সৃষ্টিতে পিছিয়ে রয়েছে এবং নতুন চালু হওয়া দু’টি পেনশন প্রকল্প নিয়ে পঞ্চায়েতগুলির ভূমিকা কী— এই বিষয়ে এ দিন বৈঠক ডেকেছিল জেলা প্রশাসন। উপস্থিত ছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। দ্বিতীয় ভাগে দুপুর দুটো নাগাদ মঞ্চে হাজির হন অনুব্রত। সেই সময় আদিবাসী জনজাতি এবং তফসিলি জাতির ষাটোর্ধ্ব মানুষেদর জন্য পেনশন প্রকল্প ‘জয় জোহার’ ও ‘তফসিলি বন্ধু’ নিয়ে আলোচনা চলছে। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ আধিকারিক মাইক হাতে বোঝাচ্ছিলেন, কী ভাবে আবেদন করতে হবে। প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা ঠিক বুঝলেন কিনা, তা জানতে চান অনুব্রত।
কয়েক জন বিডিও-র কাছেও জানতে চান, তাঁরা এ বিষয়ে এলাকায় শিবির করছেন কিনা।
হঠাৎই ময়ূরেশ্বরের ১ বিডিও-র খোঁজ করেন। বিডিও ছিলেন না। উঠে দাঁড়ান যুগ্ম-বিডিও। অনুব্রত বলেন, ‘‘ময়ূরেশ্বর ১-এর বিডিও কোনও কাজ জানেন না বা কাজ করেন না। আপনি জেলাশাসককে বলুন। ওঁকে শো-কেসে ভরে রেখে কোনও লাভ নেই। যা করার আমি করছি।’’ হঠাৎ তিনি কেন এমন কথা বললেন, সেটা অবশ্য বোঝা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার বিডিও-দের একটা অংশ বলছেন, সৌজন্য বলেও একটা বিষয় থাকে। এ ভাবে বলা ঠিক হয়নি। ময়ূরেশ্বর ১-এর বিডিও গোরাচাঁদ বর্মণকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। তবে, স্থানীয় সূত্রে খবর, তিনি অসুস্থ।
এর পরে অনুব্রতের তোপের মুখে পড়েন নির্মাণ সহায়কেরা। এমজিএনআইজিএ প্রকল্পে জেলার তথ্য অনুযায়ী, গ্রাম পঞ্চায়েত গড়ে ৮৬ হাজার কর্মদিবস তৈরি করেছে। কিন্তু বেশ কিছু পঞ্চায়েত এ কাজে পিছিয়ে রয়েছে। মঞ্চে উপস্থিত এমজিএনআরইজিএ-র নোডাল অভিসার শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলছিলেন, সব থেকে পিছিয়ে মহম্মদবাজার ব্লকের পঞ্চায়েতগুলি। মহম্মদবাজার বড় ব্লক। ১২টি পঞ্চায়েত থাকা সত্ত্বেও কর্মদিবস সৃষ্টির গড় খারাপ হওয়ায় রেগে যান অনুব্রত। ডেউচার নির্মাণ সহায়ককে মাইক হাতে নিতে নির্দেশ দেন। নির্মাণ সহায়ক বলেন, তিনটি সংসদে কাজ চলছে। বাকি অংশে কাজ হচ্ছে না।
অনুব্রত বলেন, ‘আপনি কাজ করেন?’ উত্তর এল, হ্যাঁ। অনুব্রতের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘তাহলে এই অবস্থা কেন। কাকে জানিয়েছেন। বিডিও জানেন? ডিএম জানেন? কেউ বাধা দিলে থানায় এফআইআর করেননি কেন? নিজে অফিস করেন?’’ নির্মাণ সহায়ক কিছু বলতে যাচ্ছিলেন।
তখন অনুব্রতের পাশের চেয়ারে বসা জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘ওই ব্লকের অবস্থা খারাপ বলে জেলা পরিষদের সেক্রেটারি বাপ্পা গোস্বামীকে দেখতে বলা হয়েছিল।’’ মঞ্চে থাকা বাপ্পাবাবু জানান, তিন বার ওই ব্লকে প্রত্যেক নির্মাণ সহায়কের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রতিবার ওঁরা জানান, স্কিম তৈরি করেছেন। ‘‘কিন্তু সেই স্কিম বা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলে কী লাভ?’’—প্রশ্ন ওই আধিকারিকের। এটা শুনেই অনুব্রত জানেত চান, ওই নির্মাণ সহায়কয়দের বাড়ি কোথায়। উত্তর আসে বেশির ভাগেরই বাড়ি রামপুরহাটে। কারও কারও সিউড়িতে। অনুব্রত বলেন, ‘‘কাউকে খয়রাশোল, কাউকে নানুর বা মরারইয়ের শেষ প্রান্তে কমপক্ষে ৮০ থেকে ৯০ কিমি দূরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’
এ ক্ষেত্রেও অনুব্রত প্রকাশ্যে এমন বলতে পারেন কিনা, তা নিয়ে চর্চাশুরু হয়েছে। তবে পদাধিকারীকদের একটা অংশ বলছেম, কাজ না হলে রাজ্য সরকারেরই মুখ পুড়বে। সেটা ঘটছে দেখে মাথার ঠিক রাখতে পারেননি এসআরডিএ-র চেয়ারম্যান।