গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে ‘ইকো গাইড সেন্টার’। শীঘ্র উদ্বোধনের কথা। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চকোট পাহাড়ের ঘন জঙ্গলকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে আগে। ফলে, সাধারণ বাসিন্দা ও পর্যটকদের পক্ষে পাহাড়ের উপরে ওঠার ক্ষেত্রে জারি হয়েছে নানা বিধিনিষেধ। তবে পাহাড় চূড়ায় উঠতে না পারা পর্যটকেরা যাতে মুখ বেজার করে ফিরে না যান, তা নিশ্চিত করতে বিকল্প পথের সন্ধান দিচ্ছে বন দফতর।
প্রশাসন জানিয়েছে, এ বার ইচ্ছা হলেই বন দফতরের ছাড়পত্র পাওয়া গাইডদের নিয়ে ‘নেচার ট্রেলিং রুট’ দিয়ে পাহাড়ের উপরে উঠতে পারবেন পর্যটকেরা। এই ‘রুট’-এর পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছে বন দফতর। আবার সেখানে ‘জাইকা’ প্রকল্প থেকে পাওয়া অর্থে তৈরি করা হয়েছে একটি ‘ইকো গাইড সেন্টার’।
বন দফতর সূত্রের খবর, সব ঠিক থাকলে আগামী ৬ ফ্রেবুয়ারি ওই গাইড সেন্টারের উদ্বোধন করার কথা বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার পরেই ‘নেচার ট্রেলিং রুট’ পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। বন দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘৬ ফ্রেবুয়ারি বনবান্ধব উৎসবের উদ্বোধনে রঘুনাথপুরে আসার কথা বনমন্ত্রীর। তাঁর ইকো গাইড সেন্টারের উদ্বোধন করার কথা। তার পরেই পাহাড়ে ওঠার নেচার ট্রেলিং রুট খুলে দেওয়া হবে।”
রঘুনাথপুর মহকুমার নিতুড়িয়া ব্লকের গড় পঞ্চকোট পাহাড়ে ২৯৩টি প্রজাতির ওষধি গাছ আছে। রয়েছে অন্য অনেক প্রজাতির গাছ ও বন্যপ্রাণ। বন দফতরের দাবি, গড় পঞ্চকোটের জঙ্গলে হায়না, প্যাঙ্গোলিন, গন্ধগোকুল, সজারু, খরগোস, শেয়াল রয়েছে রয়েছে পাইথন এবং অন্তত ১৫-২০ প্রজাতির বিষধর সাপ। এই বৈচিত্রের কারণে বছর তিনেক আগে গড়পঞ্চকোটকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ার কারণে এখন অনুমতি ছাড়া, পাহাড়ে চড়া নিষেধ। পাহাড়ের এক প্রান্তে হদহদি থেকে ছ’শো মিটার উপরে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার রাস্তা আছে। সূত্রের খবর, পাহাড়ে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা এলাকাবাসীর থেকে সেই রাস্তার সন্ধান পেয়ে পাহাড়ে চড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু জঙ্গল সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় অনুমতি মেলে না।
এ বার সেই সমস্যায় সমাধান হতে চলেছে। সাড়ে সাত কিলোমিটার রাস্তা দিয়ে জঙ্গলে ঘেরা পথ বেয়ে পর্যটকেরা যাতে পাহাড়ের উপরে উঠতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করেছে বন দফতর। এই রাস্তায় পর্যটকেরা ট্রেকিংয়ের রোমাঞ্চ অনুভব করতে পারবেন, জানাচ্ছেন নিতুড়িয়ার বিট অফিসার শুভেন্দু বিশ্বাস। বন দফতর পাহাড় সংলগ্ন রামপুর, পাঞ্চেত ও বাগমারার চার যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘গাইড’ হিসাবে নিযুক্ত করেছে। তাঁদের দেওয়া হয়েছে ‘ইউনিফর্ম’। গড়পঞ্চকোট পাহাড়ের ইতিহাসও তাঁদের জানানো হয়েছে। রেঞ্জ অফিসার (রঘুনাথপুর) বিবেক ওঝার কথায়, ‘‘পাহাড় চূড়ায় ওঠার সময় গাইডেরা পর্যটকদের সেই ইতিহাস শোনাবেন।’’
পাহাড়ে ওঠার আগে পর্যটকেরা ঘুরে দেখতে পারেন ‘ইকো গাইড সেন্টার’। প্রয়োজনে সেখানে তাঁরা ব্যাগ এবং অন্য জিনিসপত্র রাখতে পারবেন। পাহাড়ের চূড়া থেকে এলাকার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য ‘ভিউ পয়েন্ট’ তৈরি করেছে প্রশাসন। গোলাকৃতি সেই স্থানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘গোলঘর’। দফতরের দাবি, সাড়ে সাত কিলোমিটার রাস্তা বেয়ে পাহাড়ে উঠতে সময় লাগবে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা।