Ayushman Bharat Project

বেতন বাড়ানোর কী হল

পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের রাজ্য কমিটির সদস্য অর্চনা খাঁয়ের দাবি, তাঁরা রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া, পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৫
Share:

রেলমন্ত্রীর রাজ্য ভিত্তিক বরাদ্দের ঘোষণা শুনছেন রেলের আধিকারিকেরা। আদ্রার ডিআরএম অফিসে। নিজস্ব চিত্র ।

আশাকর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় আনা হবে বলে বৃহস্পতিবার অন্তর্বতী বাজেটে ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এতে তাঁরা দেশের সর্বত্র নিখরচায় চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। কিন্তু তাতে হাসি ফুটছে না পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার আশাকর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের। তাঁদের দাবি, আগে বেতন বাড়ানো-সহ দাবি মতো অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হোক।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের রাজ্য কমিটির সদস্য অর্চনা খাঁয়ের দাবি, তাঁরা রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় এলে এ বার দেশের অন্যত্রও চিকিৎসার সুযোগ মিলবে ঠিকই। কিন্তু তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে যে সব দাবিগুলি নিয়ে আন্দোলন করছেন, তা নিয়ে কোনও বাক্য ব্যয় করা হয়নি।

অর্চনার দাবি, ‘‘আমাদের বেতন-বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন পরিষেবার ভাতা বাড়ানোর দাবি রয়েছে। শিশুদের প্রতিষেধক দেওয়ার ভাতা দ্বিগুণ করার দাবিও উপেক্ষিত। আমরা স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজ করি, অথচ স্বাস্থ্যকর্মীর স্বীকৃতি পাইনি। ডিসেম্বরে এই দাবিগুলি নিয়ে দেশের আশাকর্মীরা দিল্লিতে গিয়ে স্মারকলিপিও জমা দিই। তা নিয়ে বাজেটে কোনও উচ্চবাচ্য হল না।’’

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ আশা কর্মী ইউনিয়নের বাঁকুড়া জেলা নেত্রী কল্পনা টুডুর দাবি, বহু আশাকর্মীই নানা জটিল রোগে অসুস্থ। কিন্তু সরকারি ভাবে কোনও সুবিধা মিলছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাতনা ব্লকের এক আশাকর্মী বলেন, “জটিল রোগে আমি আক্রান্ত। নিয়মিত ভেলোরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। সেখানে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা পাই না। নিজেদের জমানো টাকা ভেঙেই চিকিৎসা করাচ্ছি।”

একই দাবি করছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইসিডিএস কর্মী সমিতি-ও। তাঁদের দাবি, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে এলে দেশের সর্বত্র হয়তো চিকিৎসা পরিষেবা মিলবে, কিন্তু তার আগে সম্মানজনক বেতন দিয়ে পেট ভরানোর ব্যবস্থা করা দরকার। সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদিকা আশালতা বিশ্বাসের মতে, ‘‘পারিশ্রমিক হিসেবে যা পাই তাতে অতি সাধারণন ভাবেও সংসার চলে না। পেনশন, গ্র্যাচুইটি থেকে অ্যান্ডয়েড ফোনের ইন্টারনেটের খরচ দেওয়ার দাবি পূরণ হওয়া আগে প্রয়োজন। অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি দূরে থাক, অবসরের পরে এককালীন তিন লক্ষ টাকা যা কর্মীদের পাওয়ার কথা, তা-ও অনেকে পাননি।

ওয়েস্ট বেঙ্গল অঙ্গনওয়াড়ি ওয়ার্কাস অ্যান্ড হেল্পার্স ইউনিয়নের বাঁকুড়া জেলা সভানেত্রী চায়না কর্মকার বলেন, “অনেক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বা সহায়িকা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। পকেট থেকে টাকা খরচ করে তাঁদের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। যদি কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে আমাদের সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে রাজ্য সরকার যেন ওই প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়িত করার ব্যবস্থা করে।’’

তবে এ নিয়ে রাজনৈতিক কাজিয়া তুঙ্গে উঠেছে। তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, “স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে প্রতিটি বধূর পরিবার স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাচ্ছে। সেই কার্ড নিয়ে ভেলোরে গিয়ে চিকিৎসাও করিয়ে আসছেন অনেকে।’’ পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, এটা বিজেপির ভোট বৈতরণী পার হওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। তাঁরা যে নায্য দাবিগুলি নিয়ে দীর্ঘদিন রাস্তায় রয়েছেন, বাজেটে সে সব দাবি পূরণের ঘোষণা কোথায়?’’

বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, ‘‘বিজেপি দেশের মহিলাদের শক্তিশালী ও স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু এই রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কী হাল, তা ভুক্তভোগী মানুষজনই জানেন। রাজ্যের বাইরে এই কার্ডে চিকিৎসা মেলে না।’’

বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডলের দাবি, কেবলমাত্র রাজনীতির স্বার্থে কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে এই রাজ্যের মানুষকে বঞ্চিত করে রেখেছে তৃণমূল সরকার। তবে এবার সর্বস্তরেও ওই প্রকল্প চালুর দাবি উঠবে। আর কোনও ভাবেই মানুষের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখা যাবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement