শান্তিনিকেতনে প্রতীচী বাড়িতে একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন,আশ্রমিক কল্পিকা মুখোপাধ্যায় ও আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর।মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
শান্তিনিকেতনকে আর ‘পুরনো দিনে’ ফেরানো যাবে না বলে মনে করেন অমর্ত্য সেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনের প্রতীচী বাড়িতে তাঁকে নিয়ে লেখা একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, “প্রশ্ন হচ্ছে, শান্তিনিকেতনের ভবিষ্যৎ কী হবে। এ বিষয়ে সুপ্রিয় (ঠাকুর) যতটা ভেবেছেন, অতটা বোধহয় কেউই ভাবেননি।”
আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর এ দিন অমর্ত্যের পাশেই ছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। বিশ্বভারতীতে উপাচার্য পদে বিভিন্ন ব্যক্তির নিয়োগ নিয়েও অমর্ত্য মত প্রকাশ করেন। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের একটা সমস্যা হচ্ছে, আমাদের উপরে উপাচার্য হয়ে যাঁরা আসছেন, তাঁরা অনেক সময় ঠিক কাদের পক্ষে যুক্তিযুক্ত, সে-রকম বলা যাচ্ছে না। আমি কাউকে নিন্দা করে বলছি না। কিন্তু এটা ঠিকই যে, শান্তিনিকেতনকে সেই পুরনো দিনে নিয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।’’ তাঁর সংযোজন, বিশ্বভারতী ভালভাবে চলুক, এখানে পড়াশোনা ভাল হোক।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতীচী বাড়িতে ‘অমর্ত্য সেন সংখ্যা’ নামক পত্রিকার আবরণ উন্মোচন করেন নোবেলজয়ী। উপস্থিত ছিলেন আশ্রমিক তথা বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপিকা কল্পিকা মুখোপাধ্যায়, আশ্রমিক সুদর্শনা সেন, প্রতীচী বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা গীতিগণ্ঠ মজুমদার এবং বিশ্বভারতীর কিছু পড়ুয়া। এই অনুষ্ঠানেও ধর্মনিরপেক্ষতার উপরে জোর দেন অমর্ত্য। বলেন, “ভারতবর্ষ একটি সাম্প্রদায়িকতার হাতে পড়বে, এটা আমরা চাই না। সে হিন্দু রাষ্ট্রই হোক বা মুসলমান নবাবই হোক অথবা খ্রিস্টান রাজত্বই হোক। আমরা চাই, সব জায়গা থেকে সব কিছু এক সঙ্গে হতে পারে। যা রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছা ছিল।”
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আরও এক বার আক্ষেপের সুর এ দিন শোনা গিয়েছে অমর্ত্যের গলায়। ক’দিন আগে প্রতীচী ট্রাস্টের একটি আলোচনাসভাতেও তিনি বলেছিলেন, নালন্দা নিয়ে আগের সরকার ও বর্তমান সরকার কিছু করেনি। এ দিনও তিনি বলেন, ‘‘আমরা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় একটা প্রচেষ্টা করেছিলাম। যাতে চিন কোরিয়া, জাপান ইত্যাদি দেশ থেকে পড়াশোনা করতে আসতে পারে পড়ুয়ারা। তাদের পড়াশোনার মান অত্যন্ত ভাল ছিল। সেটা অবশ্য মানার ইচ্ছা সরকারের ছিল না। তার ফলে এটা পরিষ্কার হল যে, আমি যদি সেখানে আচার্য হিসেবে থেকে যাই, তা হলে নালন্দায় কোনও রকম সাহায্য সরকার থেকে পাওয়া যাবে না। সেই সময় আমি চলে গেলাম।”