স্বাস্থ্যপরীক্ষা করছেন এএনএম অলকা মাহাতো। নিজস্ব চিত্র।
ঘরে সন্তান প্রসব করানোই একসময় এলাকায় দস্তুর ছিল। সেই অবস্থায় মহিলাদের বুঝিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব করাতে আগ্রহী করার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এক স্বাস্থ্যকর্মী। ঝালদা ১ ব্লকের এএনএম অলকা মাহাতো তাই ঝালদা-দঁড়দা পঞ্চায়েতের হোসেনডি এলাকাবাসীর কাছে ‘ডাক্তারদিদি’ হয়ে উঠেছেন।
স্থানীয়েরা জানান, অলকা একসময়ে হোসেনডি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্ত কাজ একাই সামলেছেন। পরে সেখানে কর্মী-সঙ্কট কেটেছে। তবে এখনও গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে মহিলাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা, শিশুদের টিকা দেওয়া থেকে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে মহিলাদের বুঝিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব করাতে রাজি করানোর কাজ সমান তালে করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি নিয়মিত অফিসে রিপোর্ট পাঠানোর কাজও রয়েছে।
অলকার কথায়, ‘‘মহিলারা কত আশা নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। চাপের মধ্যেও সাধ্য মতো তাঁদের পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’ এলাকার বাসিন্দা তথা ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহ-সভাপতি শেখ সুলেমান বলেন, ‘‘আগে এলাকার অধিকাংশ মহিলা হাসপাতালে সন্তান প্রসব করাতে যেতেন না। সেই ছবিটা এখন অনেকখানি বদলেছে। এর কৃতিত্ব অনেকটাই অলকা মাহাতোর।’’
অলকার কথায়, ‘‘ঘরে প্রসব কতটা বিপজ্জনক তা বোঝানোর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ক্ষেত্রে সরকারি কী কী সুবিধা রয়েছে তা-ও বলি। সহজ করে বোঝাতে পারায় এটা সম্ভব হয়েছে।’’
হোসেনডি গ্রামের নূরপুরি খাতুন, সগুপ্তা খাতুনদের কথায়, ‘‘শারীরিক কোনও সমস্যা হলেই আমরা প্রথমে ডাক্তারদিদির কাছেই যাই। তাঁর কাছে ঠিক পরামর্শই পাই।’’ দিনে দিনে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত হোসেনডি এবং কাঁটাডি গ্রামের কমবেশি ১০ হাজার মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে অলকার ওই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ঝালদা ১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের গ্রাফ নীচে দেখে আমরাও চিন্তায় ছিলাম। সেই অবস্থা এখন অনেকটাই বদলেছে। এই বদলের কৃতিত্ব অনেকটা যে অলকা মাহাতোর, সেটা স্বীকার করতেই হয়।’’