—ফাইল চিত্র।
ধোপঘাটি— তুমি কার? প্রকৃতির না দখলদারের? ভাগীরথীর পাড় তুমি কার? প্রকৃতির না দখলদারের?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন নবান্ন থেকে জলাভূমি ভরাট ও সরকারি জমি দখলের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের কথা বলছেন, তখন বহরমপুরের ঐতিহ্যবাহী ধোপঘাটি জলাশয়ের দখলদারি ঘিরে যেমন প্রশ্ন উঠছে, তেমনই ভাগীরথীর পাড় দখলের অভিযোগ উঠেছে। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাগীরথী পাড় যে ভাবে দখল হয়েছে, তাতে লোকজন আর সরাসরি ভাগীরথী দেখতে পান না। আবার ক্রমে বেদখল হচ্ছে ধোপঘাটি জলাশয়। প্রকাশ্যে দিনের বেলায়, সেই জলাশয়ের পাড় দখল করে যেমন নির্মাণ কাজ হচ্ছে, তেমনই সেই জলাশয়ের একাংশে জঞ্জাল ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। শুধু ধোপঘাটি নয়, শহরের একাধিক জলাশয়ে কোপ পড়েছে। রাস্তার ধারে সরকারি জমিতে দোকান করার অভিযোগও উঠেছে। বাসিন্দাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী যখন সরকারি সম্পত্তি দখল রুখতে কড়া হাতে মোকাবিলার নির্দেশ দিচ্ছেন, তখন বহরমপুরের লালদিঘির থেকেও বড় এই সরকারি জলাশয়টি ক্রমে বেদখল হলেও নিশ্চুপ প্রশাসন।
তবে জলাভূমি রক্ষা কমিটির মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে ধোপঘাটি সহ বিভিন্ন জলাভূমি রক্ষার দাবিতে কয়েক বছর ধরে লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। গত এপ্রিলেও জলাভূমি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে ধোপঘাটি রক্ষায় প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এ বারে তাঁরা গণসাক্ষর অভিযানে নেমেছে। বহরমপুরের বিভিন্ন জায়গায় পথসভা করে স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন। স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ শেষ হলেই শীঘ্রই তাঁরা ধোপঘাটিকে রক্ষা করা এবং ধোপঘাটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হবেন।
জলাভূমি রক্ষা কমিটির মুর্শিদাবাদ জেলার কমিটির সম্পাদক শিল্পী সেন বলেন, ‘‘ধোপঘাটিকে রক্ষার দাবিতে আমরা লাগাতার অভিযোগ জানিয়ে আসছি। কিন্তু সেই জলাশয়ের পাড়ের অবৈধ নির্মাণ কোনও ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। তেমনই জঞ্জাল ফেলে ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে, জলাশয় সংস্কার করা হচ্ছে না। তাই আমরা এবারে শহর জুড়ে গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছি।’’
বহরমপুরের পুরপ্রধান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জলাশয় ভরাট দেখার বিষয়টি পুরসভার এক্তিয়ারে পড়ে না। তবে সরকারি জমি দখলের বিরুদ্ধে আমরা আগে থেকেই অভিযান চালাচ্ছি। মাস ছয়েক আগেই শহরের কেএন রোড, পুরনো কান্দি বাসস্ট্যান্ড, গির্জা মোড়, সমবায়িকা মোড়, এফইউসি মাঠের সামনে, বাস টার্মিনাসের কাছে উচ্ছেদ অভিযান করেছি। শহরের অন্য যে সব এলাকায় সরকারি জমি দখল করে নির্মাণ হয়েছে সেগুলির বিরুদ্ধেও আমরা পদক্ষেপ করব।’’
বহরমপুরের মহকুমাশাসক শুভঙ্কর রায় বলেন, ‘‘ভোটের মধ্যে ওদের কাছ থেকে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছিলাম। তখনই ভূমি দফতরের কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল। তবে ভোটের কাজের জন্য বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে, তা দেখা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। সরকারি জমি কোনওভাবেই দখল করতে দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে সরকারি জমিতে থাকা বেশ কিছু বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
বহরমপুর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রের খবর, তারা ধোপঘাটি পরিদর্শন করে মহকুমাশাসকের দফতরে রিপোর্ট দিয়েছে। সেখানে যে ধোপঘাটির পাড় দখল করে বেআইনি নির্মাণ কাজ হচ্ছে সে কথাও মহকুমাশাসকের দফতরের জানানো হয়েছে।