রথের দিনে দুবরাজপুরে ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দ। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত
বহুকালের রীতি, রথ এলেই দুবরাজপুরের শহরের আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ঘুড়িতে। এ বারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। তবে, বেশ কয়েক বছর পর ফের বাজারে ফিরছে পেটকাটি, চাঁদিয়াল, ময়ূরপঙ্ক্ষী, মুখপোড়ার মতোকাগজের তৈরি ঘুড়ি।
দুবরাজপুরের ঘুড়ি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে নতুন প্রজন্মের নজর টানতে প্লাস্টিকের নানা ধরনের ঘুড়ি তৈরি করছেন। বেশ কিছু সুবিধার জন্য কয়েক বছর ধরে প্লাস্টিকের তৈরি ঘুড়ির দাপটে আকাশ থেকে প্রায় হারাতে বসে ছিল কাগজের তৈরির ঘুড়ির সংখ্যা। কিন্তু, দূষণ ঠেকাতে ফেরকাগজের ঘুড়িতেই ফিরতে হচ্ছে। শুক্রবার, রথের দিন থেকেই একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্য বিক্রি ব্যবহার, মজুতের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক। এ দিন সকাল থেকে দুবরাজপুরের আকাশে প্লাস্টিকের তৈরি ঘুড়ির পাল্লা ভারী থাকলেওছোট থেকে বড় অনেকেই কাগজের তৈরি ঘুড়িতেই ফিরে়ছেন।
দুবরাজপুরের বসাকপাড়ার এক ঘুড়ি বিক্রেতা সুশান্ত রায় দু’দশক ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তিনি জানান, কলকাতার বাজারে থেকে এ বার ঘুড়ি কেনার সময় মহাজনরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, সামনের বছর থেকে আর প্লাস্টিকের তৈরি ঘুড়ি মিলবে না। আর প্লাস্টিকের ঘুড়ি তৈরি হবে না। সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘এ বার প্লাস্টিকের ঘুড়ির সঙ্গে প্রচুর সংখ্যায় কাগজের ঘুড়ি এনেছিলাম। বিক্রিও হয়েছে।’’ একই বক্তব্যদুবরাজপুরের অন্যান্য ঘুড়ি বিক্রেতাদেরও। তবে, ছোটদের ঝোঁক এখনও প্লাস্টিকের ঘুড়ির প্রতি।
কাগজের আদি ঘুড়ি আকাশে দেখে স্মৃতিমেদুর শহরের অনেকেই। মধ্য চল্লিশের রামরেনু নায়ক, গোপাল দত্তেরা এককালে চুটিয়ে ঘুড়ি উড়িয়েছেন। এখনও সুযোগ পেলে লাটাইয়ে হাত দেন। তাঁদের কথায়, ‘‘যেন অতীত ফিরে পেলাম। প্লাস্টিকের তৈরি ঘুড়ি দেখে কেমন যেন অস্বস্তি হয়। কলকাতা বা অন্য শহরাঞ্চলে যে ভাবে কাগজের ঘুড়ির পেটকাটি, চাঁদিয়াল, ময়ূরপঙ্খী, মুখপোড়া, মোমবাতির মতো নানা নাম রয়েছে অঞ্চল ভেদে ,এখানে সেই নামগুলি আলাদা। তবে কাগজের তৈরি বিশাল মাপের ঘুড়ি ওড়ানোর মজাটা একই।’’
এমনিতেই বেশ কয়েক বছরে ধরে ছোটদের টানতে ঘুড়ির চরিত্র বদলে ফেলেছিলেন ঘুড়ি নির্মাতারা। প্লাস্টিকের ঘুড়ির গায়ে ছোটা ভীম, মিকি মাউসের মতো জনপ্রিয় অ্যানিমেশন চরিত্র থেকে জনপ্রিয় সিনেমার নায়ক বা ক্রিকটারের ছবি দিয়ে তৈরি শুরু হয়। এ বারও তেমন ঘুড়ি এসেছে। তবে কাগজেরঘুড়ি ফেরত আসায় খুশি বহু মানুষ। ব্যবসায়ীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, কাগজের ঘুড়ির দাম তুলনায় বেশি পড়বে। বাজার থেকে আনার সময় ঘুড়ি ছিঁড়ে যাওয়ারঝুঁকিও থাকে বিস্তর।