ছবি সংগৃহীত
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে, পুরুলিয়া-কোটশিলা রেলপথে ‘ডবল লাইন’-এর কাজ শুরু হল।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রেল বাজেটে এই লাইনটি ‘ডবল’ করার জন্য ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করে রেলমন্ত্রক। অগস্ট মাস থেকে কাজ শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, বর্তমানে যে সিঙ্গল লাইনটি রয়েছে, তার পাশের জমিতে বেড়া দেওয়ার কাজ চলছে।
আদ্রার ডিআরএম মনীশ কুমার সম্প্রতি কাজ পরিদর্শন করেছেন। ডিআরএম বলেন, ‘‘পুরুলিয়া-কোটশিলা ‘ডবল লাইন’-এর কাজ শুরু হয়েছে। রেলের নির্মাণ বিভাগ এই কাজের দেখভাল করছে।’’
রেলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ঝাড়খণ্ডের টাটানগর শিল্পাঞ্চল থেকে ধানবাদ শিল্পাঞ্চলের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেনের জন্য বর্তমানে দু’টি রুট রয়েছে। একটি চাণ্ডিল-মুরি-কোটশিলা, অন্যটি চাণ্ডিল-পুরুলিয়া-কোটশিলা। চাণ্ডিল থেকে মুরি পর্যন্ত ৬৮ কিলোমিটার ‘সিঙ্গল লাইন’ রয়েছে। অন্য দিকে, চাণ্ডিল-পুরুলিয়া-কোটশিলা রুটে পুরুলিয়া থেকে কোটশিলা পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার ‘সিঙ্গল লাইন’ রয়েছে। এই ৩৭ কিলোমিটার রেলপথকে ‘ডবল লাইনে’ রূপান্তরিত করলে রেলের এক দিকে যেমন খরচ কমবে, তেমনই পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলও অনেক বাড়বে। পাশাপাশি, ক্রসিংয়ের সমস্যার সমাধানও হবে। পুরুলিয়া-কোটশিলা ডবল লাইন হলে রাঁচী-হাওড়া ভায়া পুরুলিয়া ও আদ্রা বিকল্প একটি রুটও তৈরি হবে। পুরুলিয়ার জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো এই কাজের দাবিতে তৎপরত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘এই লাইনটি ডবল করার কাজ সম্পূর্ণ হলে কোটশিলার গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। বাড়বে পুরুলিয়া জংশনের গুরুত্বও।’’
ইংরেজ শাসনকালে ন্যারো গেজের এই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। জেলার ইতিহাস গবেষক দিলীপকুমার গোস্বামীর কথায়, ‘‘পুরুলিয়া-রাঁচী-লোহারদাগা, এই রেলপথের ১৯০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সূচনা হয়েছিল। লোহারদাগা থেকে এই রেলপথে প্রথম যাত্রিবাহী ট্রেনের সূচনা করেছিলেন বাংলার তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যান্ড্রু ফ্রেজার। সে সময় রাঁচী শহরের থেকে লোহারদাগা জনপদটির গুরুত্ব ছিল বেশি।’’ তিনি জানান, রাঁচী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা রাঁচী শহরের ইতিহাস লেখক রামরঞ্জন সেনের একটি লেখা থেকে এই তথ্য জানা গিয়েছে। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত রাঁচী-কোটশিলা রেলপথটি ন্যারো গেজ ছিল। পরে, রাঁচী থেকে কোটশিলা পর্যন্ত ব্রড গেজ হলেও কোটশিলা থেকে পুরুলিয়া ন্যারো গেজই থেকে যায়।
১৯৮২ সালে জেলার একাধিক দাবি নিয়ে পুরুলিয়া থেকে কলকাতা পদযাত্রা করে সিপিএম। তার অন্যতম ছিল পুরুলিয়া-কোটশিলা ব্রড গেজ লাইনের দাবি। বাঁকুড়া লোকসভার প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়ার চেষ্টায় ১৯৯৩ সালের জুলাই মাসে পুরুলিয়া-কোটশিলা ব্রড গেজ লাইনে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ওই লাইন সিঙ্গল থেকে যায়।ওই লাইনে ট্রেন পরিষেবা বাড়ার পরে, ক্রসিংয়ের সমস্যা দেখা দেয়। আপ কিংবা ডাউন দু’দিকের ট্রেনকেই ক্রসিংয়ের সমস্যায় নিয়মিত এক একটি স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে লাইনটি ডবল করার দাবি ওঠে।
পুরুলিয়ার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতোর উদ্যোগে রেলমন্ত্রক এই লাইনটিকে ডবল লাইন করা যেতে পারে কি না, তা নিয়ে সমীক্ষা শুরু করে। নেপালবাবু বলেন, ‘‘সে সময় মল্লিকার্জুন খাড়গে ছিলেন রেলমন্ত্রী। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মাধ্যমে রেলমন্ত্রীকে সমীক্ষার অনুরোধ জানানো হয়। সমীক্ষায় জানা যায়, লাইনটি রেলের কাছে লাভজনক হবে। তার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে এই লাইনটি ডবল করার জন্য আমরা দরবার করে আসছিলাম।’’
পুরুলিয়ার বর্তমান সাংসদ বিজেপির জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো বলেন, ‘‘রেলমন্ত্রীর কাছে এই লাইনটির জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তিনি আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন। তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’