দূষিত: রঘুনাথপুর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের ধারে নিকাশি নালায় আবর্জনার স্তূপ। ছবি: সঙ্গীত নাগ
দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে অবশেষে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পের (সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট) জন্য জমি মিলেছে। কিন্তু এখনও পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর পুরসভাকে সেই জমি হস্তান্তর করতে পারেনি প্রশাসন। এ দিকে, শিয়রে পুরভোট। শহরের যত্রতত্র জমে থাকা আবর্জনার স্তূপ দেখিয়ে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন বিঁধতে শুরু করেছেন বিরোধীরা।
১৮৮৮ সালে স্থাপিত এই পুরসভার অন্যতম সমস্যা আবর্জনা সাফাই। শহরের প্রায় সর্বত্র কমবেশি অলিগলিতে জমে আবর্জনা। ময়লা জমে প্রায় পাহাড়ের চেহারা নিয়েছে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক ও রঘুনাথপুর-বাঁকুড়া সড়কের পাশের জমিতে।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুপ্রিয় রায়ের ক্ষোভ, ‘‘রাস্তার পাশে, গলির মুখে আবর্জনা জমে থাকে। আগে নিয়মিত সাফাই হলেও এখন সপ্তাহে এক দিন সাফাই করা হয়।’’ ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কৌশিক সরকার বলেন, ‘‘পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় বাধ্য হয়ে বাসিন্দারা রাস্তার পাশে নোংরা ফেলেন। এ দিকে, ছোটগলিতে সাফাইয়ের গাড়ি ঢুকতে পারে না। সেখানে আবর্জনা সাফাইও হয় না।’’
পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের প্রদীপ দাসের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের আমলে নিজেদের দলের কর্মী-সমর্থকদের সাফাই কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তাই সাফাইও হয় না। যা হয়, তা নাম কা ওয়াস্তে।’’ বিজেপির রঘুনাথপুরের শহর সভাপতি স্বপ্নেশ দাসের কটাক্ষ, ‘‘পনেরো বছর ধরে পুরসভা চালিয়ে তৃণমূল শহরের আবর্জনা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে চূড়ান্ত ব্যর্থ। এ বার ভোটে মানুষ ওদের জবাব দেবেন।’’ যদিও সব অভিযোগই উড়িয়ে দিচ্ছেন পুরপ্রধান মদন বরাট।
পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজ্য সরকারের সহায়তায় পরিকল্পিত ভাবে আবর্জনা সাফাইয়ে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চলছে। কিন্তু জমি-জটে তা আটকে গিয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, প্রথমে শাঁকা পঞ্চায়েতের রাঙামাটি মৌজায় পুরসভাকে ওই প্রকল্প গড়তে তিন একর খাস জমি দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু শহরের আর্বজনা গ্রামে ফেলা যাবে না, এই দাবিতে প্রকল্পের বিরোধিতা শুরু হয়। তার জেরে সেখানে প্রকল্প গড়ার কাজ শুরুই করতে পারেনি পুরসভা। পরে বাবুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সিলেটি মৌজায় প্রায় তিন একর খাস জমি ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্পের জন্য পুরসভাকে হস্তান্তর করেছিল প্রশাসন। সেখানেও একই সমস্যা তৈরি হয়। থমকে যায় বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প রূপায়ণের কাজ।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রঘুনাথপুর পুরসভার ওই প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দেন। শেষে বিস্তর অনুসন্ধানের পরে, রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বাঁকড়া মৌজায় প্রায় নয় একর সরকারি জমি পাওয়া গিয়েছে। আদ্রা থানার বেনিয়াসোলের অদূরে ওই জমি পুর-শহরের সীমানা থেকে অনেকটাই কাছে বলে জানাচ্ছেন রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘‘জমি হস্তান্তর হলেই প্রকল্প গড়ার কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি আমরা।” মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর বলেন, ‘‘জমির সন্ধান পাওয়ার পরেই তা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের হাত থেকে পুরসভাকে হস্তান্তর করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় নথি ইতিমধ্যেই জেলায় পাঠানো হয়েছে।”
পুরসভা সূত্রের খবর, গোড়ায় প্রকল্পের সীমানা প্রাচীর তৈরির জন্য ১ কোটি ৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। কিন্তু সেই কাজ শুরু হয়নি বলে টাকা ফেরত চলে যায়।
পরে অবশ্য বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পের কিছু রদবদল করা হয়। প্রথমে মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট (এমইডি) এই প্রকল্পের বিস্তারিত খরচের রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করেছিল। পরে, প্রকল্পের মধ্যে ‘বায়ো-গ্যাস প্ল্যান্ট’ এবং ‘সলিড’ ও ‘লিকুইড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় নতুন করে ‘ডিপিআর’ তৈরির কাজ চলছে। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪ কোটি টাকা। প্রকল্প বাড়ায় খরচও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।