কী কারণে ত্বকের রঙে বদল আসছে, কেন পড়ছে দাগছোপ, কারণটা কী? ফাইল চিত্র।
ত্বকের রঙে বদল এলেই অনেকের মনে হয়, ট্যান পড়ছে। গালে কালো দাগছোপ দেখা দেওয়া মানেই কেবল চর্মরোগ নয়। নেপথ্যে থাকতে পারে অন্য কারণও। দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ (এনআইএইচ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ত্বকের রঙে বদল অথবা ব্রণ-ফুস্কুরি বা ত্বকের প্রদাহ জনিত নানা অসুখের কারণ হতে পারে অন্ত্র। শরীরের এই অঙ্গটিই হজমপ্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। কাজেই সেখানে গোলমাল হলে তার ছাপ পড়ে ত্বকেও।
এনআইএইচ-এর গবেষকেরা জানাচ্ছেন, অন্ত্রের সঙ্গে ত্বকের সরাসরি সম্পর্ক আছে। অন্ত্রের ভাল ব্যাক্টেরিয়ারা যেমন বিপাকক্রিয়াকে উন্নত করে, তেমনই ত্বকের স্বাস্থ্যও ভাল রাখে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত নেশার প্রকোপ অন্ত্রে ভাল ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা কমিয়ে দেয়। ফলে বিপাকক্রিয়ায় এর প্রভাব পড়ে। অন্ত্রে প্রদাহ তৈরি হয়, যার রেশ পড়ে ত্বকেও। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিন্যাল ডিজ়অর্ডার’। এই রোগের বাড়াবাড়ি হলে খাদ্যনালিতে সংক্রমণ, এমনকি কোলনে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।
খাবার খাওয়ার পরে তা পৌঁছয় পাকস্থলীতে। সেখানে ছোট ছোট টুকরো হয়ে কিছু পরিমাণ আত্তীকরণ হয়, বাকিটা পৌঁছয় ক্ষুদ্রান্ত্রে। এই ছোট ছোট টুকরো হয়ে ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারটা ব্যাহত হলেই পাকস্থলীর পুরো প্রক্রিয়া নষ্ট হতে শুরু করে। তখনই শুরু হয় পেট ফোলা, বমি-বমি ভাব ইত্যাদি, যা ‘গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিন্যাল ডিজ়অর্ডার’-এর লক্ষণ। শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, ফাইবার ও খনিজের ঘাটতি হলেও এমন হতে পারে। অতিরিক্ত তেলমশলা দেওয়া খাবার খেলে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়, তখন তা ঠিকমতো হজম না হওয়ার কারণে অন্ত্রে প্রদাহ তৈরি করে। রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটায় এবং যে কারণে ত্বকে দাগছোপ বা ‘পিগমেন্টেশন’ দেখা দিতে শুরু করে। ফ্যাকাশে এবং নিষ্প্রাণ ত্বকের কারণই হল ‘গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিন্যাল ডিজ়অর্ডার’।
গবেষকেরা আরও দাবি করেছেন, অনেকেই ওজন কমানোর জন্য নানা রকম ওষুধ খান। ওই ওষুধগুলি পাকস্থলীর পেশিগুলিকে দুর্বল করে দেয়, ফলে খাবার আর ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছতে পারে না। তখন জটিলতা বাড়ে। এর বড় প্রভাব পড়ে ত্বকে। চামড়া কুঁচকে যাওয়া, অকালে বলিরেখা পড়া, ত্বকের নানা অসুখও দেখা দিতে পারে। তাই অন্ত্রকে ভাল রাখলেই সুস্থ থাকবে ত্বক। সে জন্য খাদ্যাভ্যাসে বদল আনতে হবে। বেশি করে সব্জি ও মরসুমি ফল খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও পানীয়, অ্যালকোহলের মাত্রা কমাতে হবে। পর্যাপ্ত জল খেতে হবে ও নিয়মিত ব্যায়ামও আবশ্যক।