সঙ্গে আছি। শনিবার শিবপুরে মৌজার সাবিরগঞ্জে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বার্তা। নিজস্ব চিত্র।
আন্দোলনকারীদের ন্যায্য দাবি পূরণে প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্ট অবধি লড়বেন— শিবপুরের ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়ে এমনই আশ্বাস দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
শনিবার বিকেলে বোলপুরের শিবপুর মৌজায় আন্দোলনকারী জমিমালিক, চাষি, বর্গাদার, খেতমজুর ও ভাগচাষিদের ডাকে ওই সভায় যোগ দেন তিনি। সভায় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ও কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থক মিলিয়ে শতাধিক লোক হয়েছিল। অধীরের দাবি, ‘‘জমি আন্দোলন করে ক্ষমতায় আসা মা-মাটি-মানুষের সরকার এখন চাষিদের থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। শিবপুর মৌজায় আবাসন, বিশ্ববিদ্যালয় হলে স্থানীয় জমিমালিক, চাষি এবং জমির উপর নির্ভরশীলদের প্রকল্প এলাকায় দারোয়ান, ঝি, চাকর হয়ে ভ্যারেন্ডা ভাজার কাজ পাবেন!’’ সভা সেরে মিছিল করে ফেরার পথে অধীরকে লক্ষ্য করে এলাকার কিছু তৃণমূল কর্মী অবশ্য ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেন।
এ দিনের প্রতিবাদ সভাকে কেন্দ্র করে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে, তার জন্য শুক্রবার বিকেলে থেকেই এলাকায় পুলিশ নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুবিমল পালের নেতৃত্বে আশপাশের থানা এলাকার আইসি ও ওসিদের এবং গোয়েন্দা বিভাগের তৎপরতা ছিল তুঙ্গে। এ দিন শতাধিক কর্মী-সমর্থক নিয়ে বাইপাস মোড় থেকে প্রায় দু’ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে প্রকল্প এলাকা লাগোয়া সাবিরগঞ্জে আসেন অধীর। আসা যাওয়ার পথে এবং এলাকায় উর্দিধারীদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে মোতায়েন পুলিশের সংখ্যা দেখে প্রতিবাদ সভায় নিজের ক্ষোভ উগরে দেন অধীর। পুলিশকে তিনি কখনও মুখ্যমন্ত্রীর ‘পোষা কুকুর’ তো কখনও ‘মাস্তান’ বলে মন্তব্য করেন। আবার মাইক বাজিয়ে সভা করার অনুমতি না দেওয়ায় একটি ছোট টেবিলের উপরে দাঁড়িয়ে অধীর বক্তৃতা দেন। সঙ্গে ছিল হ্যান্ডমাইক। সভার প্রথমেই অধীর অভিযোগ করেন, পুলিশ এবং মাস্তান পাঠিয়ে এই প্রতিবাদ সভায় যোগ না দেওয়ার জন্য এলাকায় এলাকায় হুমকি দিয়েছে শাসকদল।
শিল্প ও কর্মসংস্থানের দাবিতে প্রতিবাদে নামা আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে অধীর জানান, এই জমি আন্দোলনের দাবি যথার্থ, সঠিক এবং ন্যায্য। তার কণ্ঠরোধ করতে মুখ্যমন্ত্রী ‘পোষা কুকুর’ পাঠিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। চাষিদের ন্যায্য দাবি এবং জমি আন্দোলনকে দমন করতে ভাঙড় থেকে শিবপুর— সর্বত্র রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ‘জরুরি পরিস্থিতি’ জারি করেছেন বলেও তাঁর অভিযোগ। অধীর বলেন, “অস্ত্রশস্ত্র নেই, ঢাল নেই, তরোওয়ালও নেই। তা হলে এত পুলিশ কেন এখানে? মানুষের সঙ্গে কথা বলতে, আন্দোলনকারীদের কথা শুনতে এসেছি। প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করতে উনি পোষা কুকুর পাঠিয়ে দিয়েছেন। যেন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলছে!” এই প্রসঙ্গেই রাজ্যে চুরি, ডাকাতি এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতির প্রসঙ্গ তোলেন অধীর। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘যেখানে পুলিশ থাকার কথা, যাওয়ার কথা— সেখানে তাদের দেখা নেই। অথচ তৃণমূলের দালালি করে মেরুদণ্ডহীন দলদাস হয়ে সভায় মাইক বাজানোর অনুমতি দিতে পারছে না।”
সভা শেষ করে আন্দোলনকারী চাষিদের সঙ্গে মিলিত হন। তাঁদের সমস্যা এবং দাবিদাওয়ার কথা স্পষ্ট করে জেনে নেন। শাসকদলের হুমকি উপেক্ষা করে বহু কষ্টে তাঁরা ওই সভায় যোগ দিয়েছেন বলে জানান কয়েক জন আন্দোলনকারী। অধীর তাঁদের প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি এলাকায় থেকে শিল্প, কর্মসংস্থান এবং ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেন। আন্দোলনকারীদের পক্ষে এক জমিদাতা বলেন, ‘‘উনি আমাদের পাশে দাঁড়াতে এখানে এলেন। আমরা লড়াই চালাতে আরও উদ্বুদ্ধ হলাম। আমাদের সমস্ত দাবি না মেটা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।’’ আগামী বৃহস্পতিবার প্রশাসনের শিবিরে কেউ-ই ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ হাজার টাকা (বিঘে প্রতি) নিতে যাবেন না বলেও আন্দোলনকারীরা দাবি করেন।
এ দিকে, অধীরকে গুরুত্ব দিতে নারাজ জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। নলহাটিতে একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার উন্নয়নে একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত সাজাচ্ছেন। শিবপুর মৌজায় একটা ইউনিভার্সিটি হবে। সেখানে অধীয় চৌধুরীর মতো কিছু লোক সভা করে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন।’’