তালে তালে কাশীপুরে। তাঁবু। ছবি: সঙ্গীত নাগ।
কখনও ধামসা মাদলে বোল তুলে ছুঁয়ে গেলেন আদিবাসী আবেগ, কখনও বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির আর্জি শুনতে রাস্তাতেই বসে পড়লেন। পুরুলিয়ায় নবজোয়ারের প্রথম দিনে জনসংযোগে এমন ভূমিকাতেই দেখা গেল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
বুধবার বিকেলে কাশীপুরে আসেন অভিষেক। সেখানে আদিবাসী নৃত্যের মাধ্যমে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়। তার পরে তিনি জনসংযোগ কর্মসূচি সারেন। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের বাড়িয়ে দেওয়া হাত ছুঁয়ে যান নেতা।
কাশীপুরের হাটতলা মোড়ে মানবাজারের বাসিন্দা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ঈশ্বরচন্দ্র বাউরিকে দেখে অভিষেক রাস্তায় উবু হয়ে বসে তাঁর সমস্যার কথা শোনেন। পরে দলের কর্মীদের তাঁর বাড়ির অবস্থা দেখে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দেন। ভাল প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া এবং আর্থিক ভাবে স্বনির্ভরতার জন্য সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজের ব্যবস্থা করার দাবি অভিষেকের কাছে জানান পুরুলিয়ার কন্যাশ্রী ব্লকের দুই মহিলা ফুটবলার রজনী বাউরি ও শিউলি বাউরি। কাশীপুরে তাঁদের অভিষেকের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেন জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া।
রজনী বলেন, ‘‘আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফুটবল উপহার দিয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়েছিলেন। অভিষেক পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’’ সেখানে উপস্থিত ফুটবলার তথা সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই দুই ফুটবলারকে উৎসাহ দিয়েছি।’’
এরপরে আদ্রা হয়ে অভিষেক রঘুনাথপুরের নতুন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। সেখানে কিছু পথে হেঁটে তিনি রোড শো করেন। আনাড়াতেও রোড শোতে প্রচুর লোক উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় অভিষেক লিপানিয়ায় জনসংযোগ করেন।
পুরুলিয়া যাওয়ার পথে মফস্সল থানার ডুমুরডিতে অবশ্য আদিবাসী কুড়মি সমাজের ঘাঘর ঘেরায় কিছুটা ছন্দপতন হয়। সেখানে সকাল থেকেই রাস্তার পাশে সংগঠনের পতাকা নিয়ে আদিবাসী কুড়মি সমাজের কর্মীরা ভাল জমায়েত করেছিলেন। সেখান থেকে কিছুটা দূরে বিকেলে জমায়েত করে তৃণমূল। ছিলেন সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হলধর মাহাতো, পরে যান জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া। গোলমালের আশঙ্কায় ডুমুরডিতে একে একে আসে বিরাট পুলিশ বাহিনী। ছিল র্যাফ-ও। পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এসে কুড়মিদের ডুমুরডি থেকে সরে যেতে বলেন। তা নিয়ে পুলিশ ও কুড়মিদের মধ্যে বিতণ্ডা বাধে। কুড়মি সমাজের নেতা শশাঙ্ক মাহাতো পুলিশ সুপারের কাছে দাবি করেন, তাঁদের কর্মসূচি পূর্বঘোষিত, শান্তিপূর্ণ। তাই তাঁরা সরবেন না। শেষ পর্যন্ত কুড়মিরা সরেননি।
অন্ধকার নামের পরে অভিষেকের কনভয় ঢুকতেই ডুমুরডিতে কুড়মিরা স্লোগান দেন, ‘ফারদার জাস্টিফিকেশন রিপোর্ট রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে হবে।’ কিন্তু অভিষেকের কনভয় না থেমে পেরিয়ে যেতেই স্লোগান বদলে যায়, প্রকাশ্যে আসে ক্ষোভ। তৃণমূল কর্মীদের বাস ডুমুরডি পার হওয়ার সময় কুড়মিদের বিক্ষোভ চরমে ওঠে। রাস্তায় নেমে তাঁরা বাস আটকানোর চেষ্টা করেন। পুলিশকর্মীরা তাঁদের আটকে দিয়ে বাস পার করেন। তবে কুড়মিরা তৃণমূল কর্মীদের বাসের গায়ে ধাক্কা মারতে থাকেন বলে অভিযোগ। তবে পুলিশের সক্রিয়তায় পরিস্থিতি ঘোরালো হয়নি।
আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতা সুজিত মাহাতো জানান, এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার হুড়া, পুঞ্চা, মানবাজার, বান্দোয়ান ব্লকেও তারা অভিষেকের পথের পাশে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করবেন। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন সকালে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা অভিষেকের কাছে দাবিদাওয়া দেওয়ার জন্য কয়েক জন প্রতিনিধির নাম চেয়েছিলেন। তার পরেও পুলিশ সরিয়ে দেওয়ার জন্য জোরজবরদস্তি করে। যা ঘটল তাতে রাজ্য সরকার ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুড়মিদের দাবির প্রতি কী মনোভাব, তা স্পষ্ট হয়ে গেল। নির্বাচনে তৃণমূলকে যোগ্য জবাব দিতে হবে। গ্রামে গ্রামে কর্মীদের তৈরি হতে বলা হচ্ছে।’’
তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া পাল্টা বলেন, ‘‘কুড়মিদের আদিবাসী করার জন্য প্রয়োজনীয় রিপোর্ট রাজ্য কেন্দ্রকে পাঠিয়েছে। সেটা আলোচনার স্তরে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সুপারিশ করেছেন। কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে অন্য কোনও সংগঠন বা দলের এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা পুরুলিয়া জেলার রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয়।’’
তাঁর দাবি, ‘‘সেখানে তৃণমূল কোনও জমায়েত করেনি। ডুমুরডিতে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেখানে আমরা জেলা নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলাম।’’
a