চুরির পরে: বিজেপির অফিসে কর্মীদের বসার জন্য মেঝেয় পাতা হয়েছে প্লাস্টিক (বাঁ দিকে)। চেয়ার-শূন্য অফিসে টেবিল গোছাচ্ছেন তৃণমূলের পুর-প্রতিনিধি ভ্রমর চৌধুরী (নীচে)। মঙ্গলবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
দেশের কুর্সি দখলের লড়াইয়ে মেতে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু ভোটের আগেই কুর্সি খোওয়াল বিজেপি ও তৃণমূল! সোমবার বাঁকুড়ায় তেমনই ঘটেছে। রসিকদের মন্তব্য, আর যাই হোক, চোর কিন্তু পক্ষপাতদুষ্ট নয়। দু’দলকেই বেছে নিয়েছে।
কোথাও সিভিক ভলান্টিয়ারের ছদ্মবেশে, কোথাও আবার দলীয় কর্মীর পরিচয়ে বাঁকুড়া শহরে তৃণমূল ও বিজেপির পার্টি অফিস থেকে বেশ কিছু চেয়ার নিয়ে চম্পট দিল চোর। তৃণমূল পুর-প্রতিনিধির বাড়ি থেকে একটি মোবাইল ফোনও উধাও হল। এই ঘটনায় দুই যুযুধান দলের নেতা-কর্মীদের মাথায় হাত পড়েছে!
প্রথম চুরির ঘটনাটি ঘটে বেলা ১০টা নাগাদ। রাইপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় যাওয়ার জন্য তখন রামপুর মনোহরতলার কাছে দলীয় কার্যালয়ে তালা দিয়ে বেরোচ্ছিলেন তৃণমূল পুর-প্রতিনিধি ভ্রমর চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাকে এক যুবক এসে দলীয় কার্যালয়ের চাবি চান। জানান, কিছু প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন রাখতে হবে। সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাক পরে থাকায় সন্দেহ হয়নি। আমি তাঁকে চাবি দিই। তিনি জানান, কার্যালয়ের চাবি আমার ভাইয়ের দোকানে রেখে যাবেন।’’ ভ্রমের দাবি, বিকেলে ফিরে এসে দেখেন, দলীয় কার্যালয়ের দরজা হাট করে খোলা। ভিতরে থাকা ১১টি প্লাস্টিকের চেয়ার, টুল গায়েব হয়ে গিয়েছে। ভ্রমরের আরও অভিযোগ, বাড়িতে গিয়ে ওই যুবক তাঁকে ফোন করার জন্য মেয়ের কাছে মোবাইল চান। তারপরে ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলতে বলতে তিনি বেরিয়ে যান। ভ্রমর জানান, গোটা ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়েছেন। মোবাইল চুরির অভিযোগও করেছেন।
স্বস্তিতে নেই বিজেপিও। সোমবার দুপুরে সাড়ে ১২টা নাগাদ বাঁকুড়া শহরের রথতলার কাছে বিজেপির কার্যালয় থেকেও প্রায় ১০টি চেয়ার ও একটি টেবিল চুরি যায়। বিজেপির বাঁকুড়া নগর মণ্ডল সভাপতি কৌশিক পাঠকের দাবি, ভরদুপুরে কার্যালয় খোলা ছিল। ভিতরে কর্মীরা ছিলেন না। সেই সুযোগে এক যুবক কার্যালয়ে ঢুকে চেয়ার, টেবিল রিকশায় তোলেন। আশপাশের লোকেরা তাঁকে প্রশ্ন করায় তিনি জানান, দলীয় কর্মসূচি রয়েছে বলে তিনি নিয়ে যাচ্ছেন। সন্দেহ যাতে না হয় তাই দলীয় কিছু পতাকাও সঙ্গে নিয়ে যান। কৌশিকের অভিযোগ, ‘‘দিনেদুপুরে এমন চুরি হতে পারে ভাবিনি। পুলিশের নিরাপত্তা যে কতটা ঠুনকো, তা বোঝা গেল। নজরদারি ক্যামেরায় চোরের ছবি ধরা পড়েছে।’’ তবে দলীয় কার্যালয়ে টিভি, দেওয়াল ঘড়ি থাকলে চোর তাতে দেয়নি দেখে অনেকেই তাজ্জব।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত থানায় অভিযোগ হয়নি। তবে চোরের হদিস পেতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নজরদারি ক্যামেরায় ধরা পড়া ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শহরে নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে।’’