—প্রতীকী ছবি।
তাপপ্রবাহের সঙ্গে অবিরাম ঘাম— অতিষ্ঠ মানুষজন। এই অবস্থায় ‘হিটস্ট্রোকে’ মঙ্গলবার বাঁকুড়া শহরে ও সোমবার ঝালদা ১ ব্লক এলাকায় এক টোটো চালক ও এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিজনেরা। যদিও দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পেলে মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ জানা যাবে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর। তবে মঙ্গলবার বিকেলে বাঁকুড়া জেলার একাংশে ঝড়ের সঙ্গে অল্প বৃষ্টি কিছুটা হলেও স্বস্তির বাতাস নিয়ে আসে।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে বাঁকুড়া শহরের পাঁচবাগায় টোটোতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন পেশায় টোটো চালক শোভন পুজারু (৪০)। ইঁদপুরের পায়রাচালির বাসিন্দা শোভন বর্তমানে বাঁকুড়ার আঁচুড়িতে থাকতেন। তাঁকে প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও পরে সেখান থেকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক জানান, মৃত্যু হয়েছে।
মৃতের মামা কল্যাণপ্রসাদ ঘটক বলেন, ‘‘শোভনের শারীরিক কোনও সমস্যা ছিল না। তীব্র গরমেই অসুস্থ হয়ে এই ঘটনা ঘটেছে।’’ যদিও বাঁকুড়া মেডিক্যালের সুপার সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দেহের ময়নাতদন্তের পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বোঝা যাবে।’’
সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ স্কুল থেকে গলদঘর্ম হয়ে বাড়ি ফিরেছিল ঝালদা ১ ব্লকের ইচাগ পঞ্চায়েতের সারজুমাতু গ্রামের ভূষণচন্দ্র মাহাতো (০৯)। বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে প্রাইমারি স্কুলে সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা দিলীপ মাহাতোর দাবি, ‘‘স্কুল ছুটির পরে বাড়িতে এসে ছেলে অসুস্থ বোধ করে। বিছানায় শোওয়ার কিছু পরেই সে নেতিয়ে পড়ে। তড়িঘড়ি ঝালদা ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক জানান, সব শেষ।’’ তাঁর মতে, অতিরিক্ত গরমের জেরেই ছেলের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের পিসেমশাই স্থানীয় জামলহর গ্রামের বাসিন্দা তথা ইচাগ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান কিরীটীভূষণ মাহাতোও বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে।’’
তবে ব্লক মেডিক্যাল অফিসার (ঝালদা ১) দেবাশিস মণ্ডল বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’’ মন্তব্য করতে চাননি বিডিও (ঝালদা ১) মদনমোহন মুর্মু।
কী কারণে মৃত্যু, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে এলাকায়। স্থানীয়েরা জানান, সারজুমাতু প্রাইমারি স্কুল পাকা ভবনের। ভিতরে বৈদ্যুতিক পাখা থেকে পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে। স্কুলের টিচার ইনচার্জ মণীন্দ্র সরেনের দাবি, ‘‘ভূষণ চনমনে ছিল। সোমবার মিড-ডে-মিলও খায়, ক্লাসে ওর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা আমাদের নজরে আসেনি।’’ মঙ্গলবার প্রার্থনার সময় শোকপাঠ করার পরে ছুটি দেওয়া হয় স্কুলে।
রবিবার পুরুলিয়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৭ থেকে মঙ্গলবার ৪৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গিয়েছে। ওই দু’দিনে বাঁকুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৩ থেকে ৪১.১ ডিগ্রিতে নেমেছে। তবে বাঁকুড়ায় সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২.৯ ডিগ্রি। বাঁকুড়া শহর, বাঁকুড়া ১ ও বাঁকুড়া ২ ব্লক, গঙ্গাজলঘাটি, বড়জোড়া, বিষ্ণুপুর-সহ কিছু এলাকায় অল্প বৃষ্টি হয়। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১.৫ মিলিমিটার। তবে তাপমাত্রা কিছুটা কমে।