উদ্ধার করা হচ্ছে সনতের দেহ। নিজস্ব চিত্র।
সন্ধ্যা থেকেই উৎকট পচা গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছিল এলাকায়। রাত বাড়তেই সেই গন্ধে টেকা দায় হয়। বাধ্য হয়ে দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে কোমর বেঁধে নামেন এলাকাবাসী। এর পর জানা যায়, পাড়ারই এক বাড়িতে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা বেমালুম চেপে রেখে দিব্যি বাড়ির মধ্যেই মৃতদেহ আগলে রেখেছিলেন দাদা ও বৌদি। অবশেষে এলাকাবাসীর সূত্রে খবর পেয়ে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মৃতদেহটি বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে পাঠায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দোলতলা মোড়ে নিজের বাড়িতেই পরিবার নিয়ে থাকেন অশোক কর্মকার। অবিবাহিত ভাই সনৎ কর্মকার আলাদা রান্না করে খেলেও থাকতেন একই বাড়িতে। অশোক ও সনৎ দু’জনে মিলে বাড়ির একাংশে রেডিয়ো, টেপ রেকর্ডার-সহ অন্যান্য বৈদ্যুতিন সামগ্রী মেরামতের দোকান চালাতেন। পারিবারিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি সনৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
শুক্রবার রাতে এলাকাবাসী উৎকট পচা গন্ধ পেয়ে বাড়িতে হাজির হলে অশোক জানান ভাই সনৎ শুক্রবার দুপুরে মারা গেছে। সনতের মৃতদেহ বাড়িতেই রয়েছে বলেও জানান তিনি। এর পর ডাকা হয় পুলিশকে। প্রাথমিক তদন্তের পুলিশের অনুমান, শরীরে যে ভাবে পচন ধরেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে মৃত্যু হয়েছে অন্তত দু’দিন আগে। স্থানীয়দেরও একই দাবি।
স্থানীয় বাসিন্দা মঙ্গল কর্মকার শনিবার বলেন, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই আমরা পচা গন্ধ পাচ্ছিলাম। কিন্তু কেউ মৃতদেহ এ ভাবে বাড়িতে ফেলে রাখতে পারে তা ভাবতেই পারিনি। দেহে যে ভাবে পচন ধরেছে, তাতে আমরা নিশ্চিত সনতের মৃত্যু হয়েছে দু’-তিন দিন আগে"। ওই এলাকার বাসিন্দা কার্তিক কর্মকার বলেন, ‘‘অশোকের পরিবারের সঙ্গে এলাকার মানুষের তেমন সদ্ভাব নেই। এলাকায় কেউ মারা গেলে এলাকার মানুষই সৎকার করার জন্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু এই মৃত্যুর ঘটনা কেউই জানত না।’’
দেহ লুকিয়ে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে অশোকের বক্তব্য, ‘‘ভাই কিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিল। বৃহস্পতিবার রাতেও সে নিজের হাতে রুমে ফ্যান চালিয়েছিল। শুক্রবার দুপুর ১১টা নাগাদ তার ঘরে গিয়ে দেখি ভাই মারা গিয়েছে।’’ ভাই মারা গেছে বুঝতে পেরেও কেন প্রতিবেশীদের জানালেন না? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি। বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে। মৃতের দাদা ও বৌদি মানসিক ভারসাম্যহীনতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।