প্রতীকী চিত্র।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি বদলের পরে নতুন করে পুরুলিয়ার ব্লক কমিটিগুলিও গড়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নতুন ব্লক সভাপতিদের নাম ঘোষণা হয়নি এখনও। এই পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে আসা একটি চিঠি নিয়ে দৃশ্যত অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল শিবির। দলের নতুন জেলা সভাপতি গুরুপদ টুডুকে লেখা ওই চিঠিতে জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির ছ’জন তৃণমূল সদস্যের সই রয়েছে। বলা হয়েছে, সদ্য দলে আসা কাউকে ব্লক সভাপতি হিসাবে মেনে নেওয়া হবে না। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ফটিকচন্দ্র গোস্বামী বলেন, ‘‘কর্মীদের মনের কথা দলকে জানিয়েছি।’’ আর জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র নবেন্দু মাহালি বলছেন, ‘‘ব্লকের নেতা-কর্মীরা তাঁদের বক্তব্য দলকে জানাতেই পারেন। এটা স্বাভাবিক বিষয়।’’
জয়পুরে তৃণমূলের অন্দরের ‘দ্বন্দ্ব’ অনেক দিনের। ব্লক কমিটি থাকলেও দীর্ঘদিন সেখানে ব্লক সভাপতি নেই। আগের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো নিজে সেখানকার কাজকর্ম দেখতেন। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে শক্তিপদ মাহাতোকে প্রার্থী ঘোষণা করার পরে, জয়পুরে তৃণমূল ‘গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব’ প্রকাশ্যে আসে। সে বার জয়পুরের দলীয় কর্মীদের একাংশ পুরুলিয়া শহরে এসে মিছিল করে দলের জেলা দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। শান্তিরামবাবু জয়পুরে যান। ওই ব্লকের নেতা কীর্তন মাহাতো ও শক্তিপদ মাহাতোকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তার পরে সমস্যা মেটে। কিন্তু ভোটে জয়পুরে তৃণমূল জিতলেও দু’টি শিবিরের সম্পর্ক জোড়া লাগেনি বলে নিচুতলার কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন।
তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের ‘সই’ করা চিঠিতে বলা হয়েছে, কোনও নতুন মুখ বা সদ্য দলে আসা কাউকে সভাপতি হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না। তেমন কিছু হলে তাঁরা ‘বিকল্প ব্যবস্থা’ নিতে বাধ্য থাকবেন। ব্লকের প্রথম সারির এক নেতাকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে। চিঠির তারিখ ৩১ অগস্ট। এ দিকে, গত ৩০ অগস্ট জয়পুর ব্লক কংগ্রেস সভাপতি চঞ্চল মৈত্র ও জয়পুর রাজ পরিবারের সদস্য তথা বিজেপি নেতা শঙ্করনারায়ণ সিংহ দেও পুরুলিয়া শহরে এসে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। চঞ্চলবাবু আগেও তৃণমূলে ছিলেন। তবে শঙ্করনারায়ণবাবু কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তৃণমূলে এসেছেন।
চিঠিতে সই রয়েছে জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য ফটিকচন্দ্র গোস্বামীর। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে জয়পুরে কোনও ব্লক সভাপতি নেই। গত পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের ফল খারাপ হয়েছে। লোকসভা ভোটে ভরাডুবি হয়েছে। এখন অনেকেই দলে যোগদান করছেন। আমরা সবাইকে স্বাগত জানাই। কিন্তু কখনও তৃণমূল করেননি, তেমন কেউ এসে সরাসরি দলের ব্লক সভাপতি হবেন, সেটা কর্মীরা মানতে চাইছেন না। তাঁদের মনের কথা আমরা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দলের ব্লক সভাপতি হিসেবে আমরা এক জনের নাম নেতৃত্বের কাছে জানিয়েছি। তিনি দীর্ঘদিন দলে রয়েছেন।’’
চিঠির ব্যাপারে নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জয়পুরের তৃণমূল নেতা কীর্তন মাহাতো। চেষ্টা করেও তৃণমূলের জেলা সভাপতি গুরুপদ টুডুর প্রতিক্রিয়া মেলেনি। জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘এখনও ব্লক সভাপতিদের নামের তালিকা ঘোষণা করা হয়নি। ব্লকের নেতা-কর্মীরা তাঁদের বক্তব্য দলকে জানাতেই পারেন।’’