প্রতীকী ছবি।
‘‘বিয়ে নয়, পড়তে চাই’’— জঙ্গলমহল এলাকা বাঁকুড়ার রানিবাঁধে রাতে থানায় হাজির হয়ে আর্জি জানিয়েছিল বছর সতেরোর মেয়েটি। পুলিশের কাছে খবর পেয়ে থানায় পৌঁছয় ‘চাইল্ডলাইন’। ডেকে পাঠানো হয় মেয়েটির অভিভাবকদের। গভীর রাত পর্যন্ত তাঁদের বোঝানোর পরে, আটকানো হল বিয়ে। সম্প্রতি বাঁকুড়ার পাত্রসায়রেও একই রকম ভাবে রাতে থানায় পৌঁছে নিজের বিয়ে আটকেছিল এক নাবালিকা। এ ধরনের ঘটনা ‘দৃষ্টান্ত’ বলে মনে করছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন।
পুলিশ ও চাইল্ডলাইন সূত্রের খবর, রানিবাঁধের দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী মঙ্গলবার রাত প্রায় সাড়ে ৮টা নাগাদ থানায় উপস্থিত হয়। পুলিশকর্মীদের কাছে সে অভিযোগ করে, বাড়ি থেকে জোর করে তার বিয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খবর পেয়ে বাঁকুড়া চাইল্ডলাইনের প্রতিনিধি শ্রীমন্ত বাউরি থানায় পৌঁছন। পুলিশ ও চাইল্ডলাইনের কর্মীরা ওই নাবালিকার পরিবারের সদস্যদের ডেকে পাঠান। তাঁদের সঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা চলে। শেষে, মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হবে না বলে তার পরিবার মুচলেকা দেয়।
ওই নাবালিকা বলে, “আমি উচ্চ মাধ্যমিকের পরেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। তবে আমার বাড়ি থেকে এখনই বিয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রায়ই বিভিন্ন জায়গা থেকে বাড়িতে অনেকে সম্বন্ধ দেখতে আসছেন। তাতে আমি অস্বস্তিতে পড়ছি। এখন বিয়ে করতে চাই না। বাড়ির লোকজন সে কথা মানছে না। তাই পুলিশের কাছে আসতে বাধ্য হয়েছি।’’ বাঁকুড়া চাইল্ডলাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল বলেন, “ওই নাবালিকার পরিবারের তরফে নির্দিষ্ট বয়সের আগে বিয়ে দেওয়া হবে না বলে মুচলেকা দেওয়া হয়েছে। আমরা নজর রাখব।’’
জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার (এনএফএইচএস) সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ সালে জেলায় নাবালিকা বিয়ের হার ছিল ৩৯ শতাংশ। ২০১৯-২০ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫.৬ শতাংশ। নাবালিকা বিয়ে রুখতে স্কুল থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, সর্বত্র প্রচার শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “এই ঘটনাগুলি অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক। নাবালিকা বিয়ের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের এক জোট করতে অঙ্গনওয়াড়ি, স্কুল-সহ তৃণমূল স্তরে প্রচুর প্রচার চালানো হচ্ছে। সে প্রচারে যে কাজ হচ্ছে, এই সব ঘটনা তার প্রমাণ।’’