নাটকের মঞ্চে মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
যে গলায় সুর ঝরে পড়ে নাটকের মঞ্চে সেই গলাতেই কর্কট রোগ। কষ্ট হয় গান গাইতে, কিন্তু অভিনয় আর গান তাঁর প্রাণ। রামপুরহাট ব্যাঙ্ক রোডের মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় নাট্য শিল্পী। বয়স ষাট পেরিয়েছে। প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে তাঁর প্রতিবাদ, সচেতনতা নাটকের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। মাস ছয়েক আগে মল্লিনাথবাবুর গলায় ক্যানসার ধরা পড়ে। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে এখন। তাতে অবশ্য দমবার পাত্র নন এক সময়ের গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের জেলা সম্পাদক। নিজে এখনও নাটক লেখেন, গান বাঁধেন। দীর্ঘ সময় ধরে একটা স্কুল পরিচালনা করেছেন। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার দাবিতে এবং প্লাষ্টিক দূষণে বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর শিল্প ভাবনার মধ্যে দিয়ে।
পশ্চিমবঙ্গ নগর জীবিকা মিশনের উদ্যোগে রামপুরহাট পুর এলাকাকে আবর্জনামুক্ত করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। শহরবাসীকে সচেতন করতে নানা ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রামপুরহাট নিশ্চিন্তপুর-শ্রীফলা মোড়ে পথ নাটিকা এবং বাউল গানের মাধ্যমে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়। ওই সচেতনতা শিবিরে রামপুরহাট নাইয়া নাট্য সংস্থা ‘প্লাস্টিকের আস্তাকুঁড়’ পথ নাটিকা পরিবেশন করে। এই নাটকে গায়ক ভিখারি এবং চলন্ত ট্রেনের সচেতন ঝাড়ুদারের চরিত্রে অভিনয় করেন মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়।
নাটকটির পরিচালক, লেখক এবং নাইয়া নাট্য সংস্থার কর্ণধার অমিতাভ হালদার বলেন, ‘‘২০০৪ সালে রামপুরহাট হাওড়া গণদেবতা এক্সপ্রেস ট্রেনে এই নাটক প্রথম অভিনিত হয়। বৃহস্পতিবার নাটকটির ১০১ তম পরিবেশনায় ক্যানসার আক্রান্ত রোগী মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় অভিনয় করে প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে বার্তা দিতে চেয়েছেন।” অমিতাভবাবুর কথায়, ‘‘প্লাস্টিকের উৎস বন্ধ করতে এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার জন্য নাটকের মাধ্যমে সমাজকে সচেতন করার চেষ্টা করছি আমরা। মল্লিনাথবাবু এই অবস্থাতেও সক্রিয় ভূমিকায় আছেন।’’
নাটকে একজন শিশু শিল্পী অরিজিৎ দে-সহ মোট ছ’জন শিল্পী অভিনয় করেছেন। গলার ক্যানসারে বারবার রে নিতে হয়েছে এই প্রৌঢ়কে। তিনি বলেন, ‘‘ছোট থেকে নাটক করছি। সাগ্নিক, রঙ্গম, প্রবাহ, অনামী নাট্য সংস্থা-সহ রামপুরহাটের প্রায় প্রতিটি নাট্য দলের সঙ্গে অভিনয় করে এসেছি। নিজে নাটক লিখি। ক্যানসারের চিকিৎসায় যদি সাড়া মেলে তবে প্লাস্টিক বন্ধের ক্ষেত্রেও সাড়া মিলবে নিশ্চয় সেই আশাতেই নাটক করা।’’
প্রৌঢ়ের সদিচ্ছা এবং অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা দর্শকদেরও আপ্লুত করেছে। রামপুরহাট পুরসভার কর্মী শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, কাউন্সিলর সুদেব দাস বলেন, ‘‘শহরকে জঞ্জাল, আবর্জনামুক্ত করতে রামপুরহাট পুরসভা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ক্যানসার আক্রান্ত হয়েও মল্লিনাথবাবু তাঁর অভিনয় দক্ষতায় পুরসভার এই প্রচেষ্টাকে সফল করার চেষ্টা করছেন। এটাই বড় কথা।’’