প্রতীকী ছবি।
ভিতর থেকে বন্ধ ঘরের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর রক্তাক্ত দেহ দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল, নিজেদের মধ্যে তাঁরা খুনোখুনি করেছেন। কিন্তু তদন্তে নেমে দু’সপ্তাহের মধ্যে পুলিশ ওই ঘটনায় যুক্ত অভিযোগে নিহতদের ঘনিষ্ঠ দু’জনকে গ্রেফতার করে দাবি করল, দম্পতিকে সুপরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। পুরুলিয়ার পাড়া থানার জবড়রা গ্রামের ঘটনা।
১৬ মে সকালে ওই গ্রামে টালিচালার বন্ধ ঘর থেকে উপাষ কৈবর্ত্য (২৬) ও তাঁর স্ত্রী দুলালি কৈবর্ত্যর (২২) দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সে ঘটনায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন উপাষের ভাই কার্তিক কৈবর্ত্য। তদন্তে নেমে খুনে যুক্ত থানার অভিযোগে দিন সাতেক আগে পুলিশ সেই কার্তিককেই গ্রেফতার করেছিল। শুক্রবার দুপুরে ওই ঘটনায় যুক্ত অভিযোগে গ্রেফতার করা হল কার্তিকের ভগ্নীপতি সুকুমার কৈবর্ত্যকে। তাঁর বাড়ি হুড়া থানার লধুড়কা গ্রামে।
এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘জেরায় ধৃত ব্যক্তি খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। সেই সঙ্গে ওই ঘটনায় আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই দম্পতির একটি বছর তিনেকের ছেলে রয়েছে। ১৬ মে সকালে কার্তিক পুলিশের কাছে খবর দেন, তাঁর দাদা ও বৌদির দেহ ঘরের ভিতরে পড়ে রয়েছে। ভাইপো দরজার বাইরে রয়েছে। পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখে, ভিতরে দম্পতির ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকায় প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল, স্বামী-স্ত্রী বোধহয় অশান্তি করে ধারাল কিছু নিয়ে মারপিট করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন। কিন্তু তলিয়ে দেখতে গিয়েই পুলিশের মনে সন্দেহ দেখা দেয়।
পুলিশ সূত্রের দাবি, বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব মেনেনি। প্রথমত, ঘটনাস্থলে কোনও ধারাল কিছু পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ত, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকলেও ঘরের ছাদের টালি ঠিকঠাক জায়গায় ছিল না। তবে কি টালি সরিয়ে কেউ ভিতরে ঢুকে দম্পতিকে খুন করেছে? কিন্তু কে, কেন?
ওই সমস্ত প্রশ্ন নিয়েই তদন্তকারীরা প্রথমে কার্তিককে জেরা শুরু করেন। পুলিশের দাবি, কার্তিকের কাছে গোড়ায় বিশেষ তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক জেরায় সে পুলিশকে দু’জনের নাম বলে, যাঁদের সঙ্গে তার দাদা উপাষের খারাপ সম্পর্ক ছিল। তাদের আটক করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। কিন্তু পরে, তাঁদের ছেড়ে দিতে হয়।
বিভিন্ন সূত্র মারফত পুলিশ জানতে পারে, উপাষের সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদ ছিল কার্তিকের। সেই সূত্র ধরে তল্লাশি চালাতে গিয়ে ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ অনেককের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্যের ভিত্তিতে খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দিন সাতেক আগে কার্তিককে গ্রেফতার করে। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ দাবি করে, কার্তিকের কাছ থেকে খুনে ব্যবহৃত ছুরি পাওয়া গিয়েছে। বর্তমানে কার্তিক জেল হাজতে।
পুলিশের দাবি, জেরায় কার্তিক তাদের কাছে দাবি করেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধেই সে ও তার ভগ্নীপতি সুকুমার উপাষ ও তাঁর স্ত্রীকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই মতো, ১৫ মে সন্ধ্যায় কার্তিক নিজের মোটরবাইক নিয়ে হুড়ায় সুকুমারকে আনতে যায়। রাতে তারা জবড়রা গ্রামে ফিরে আসে। ভোরের দিকে তারা ছাদ বেয়ে টালি সরিয়ে ভিতরে ঢুকে ধারাল ছুরি ও কুঠার দিয়ে ওই দম্পতিকে কুপিয়ে খুন করে। সে সময়ে ওই শিশুটিকে তারা ঘরের বাইরে বের করে দেয়। তারপরে টালির ফাঁক দিয়েই তারা বেরিয়ে যায়। পরদিন কার্তিক নিজেই পড়শিদের ডেকে ওই দম্পতি নিজেদের মধ্যে গোলমাল করে মারা গিয়েছেন বলে দাবি করে।
পুলিশ এমন দাবি করলেও এ দিন ধৃত সুকুমার অবশ্য সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছে সে ওই ঘটনায় যুক্ত নয় বলে।