পুরুলিয়ার জেলাশাসকের দফতরে সোমবার বিকেলে। নিজস্ব চিত্র।
এক সময়ে মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত থাকা পুরুলিয়ার ১৯ জনকে চাকরি দিল রাজ্য সরকার। সোমবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানে ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে নিয়োগপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়ায় জেলাশাসকের কার্যালয়ে সে সময়ে একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে চার জন মহিলা-সহ ওই ১৯ জনের হাতে ‘স্পেশ্যাল হোমগার্ড’-এর নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন বলেন, ‘‘পুরুলিয়ায় ১৯ জনকে নিয়োগ করা হল। এঁরা এক সময়ে মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি, কেউ ‘লিঙ্কম্যান’ হিসেবেও কাজ করেছেন।’’ জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ থেকে এ পর্যন্ত মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত থাকা ২০৬ জনকে স্পেশ্যাল হোমগার্ড হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, বিধানসভা নির্বাচনের আগে মাওবাদী ‘লিঙ্কম্যান’দের নিয়োগের দাবিতে অযোধ্যা পাহাড়, ঝালদা, আড়শা-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার পড়েছিল। সংগঠন গড়ে তুলতে ফের মাওবাদীরা এঁদের একাংশের সহায়তা নিতে পারে বলে মনে করছিলেন গোয়েন্দাদের একাংশ। তবে এ দিনের নিয়োগের ফলে সে সম্ভাবনায় দাঁড়ি পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের মত। এ দিন নিয়োগপত্র পেয়ে কেউ কিছু বলতে না চাইলেও কাজ পেয়ে খুশি বলে জানিয়েছেন।
এ দিকে, মাওবাদীদের ‘শহিদ সপ্তাহ’ চলায় জঙ্গলমহলে বাড়তি সতর্কতা জারি রয়েছে। এ মুহূর্তে রাজ্যে কোনও মাওবাদী কার্যকলাপের খবর নেই বলে মত গোয়েন্দাদের একাংশের। তবে ঝাড়খণ্ড সীমানার ও পারে কিছু তৎপরতা নজরে এসেছে এবং সে এলাকাগুলি জেলার সীমানার কাছাকাছি। বিশেষত, ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলা থানার বাসাডেরা জঙ্গল ও গালুডি থানার আমবেড়া জঙ্গলে সম্প্রতি মাওবাদী কার্যকলাপের কথা গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে। সে এলাকার দূরত্ব বান্দোয়ান থেকে কমবেশি ২৫-২৬ কিলোমিটার।
পাশাপাশি, বর্তমানে দলমা স্কোয়াডে থাকা অসীম মণ্ডল ওরফে আকাশের নেতৃত্বে একটি স্কোয়াড সক্রিয় রয়েছে বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। কয়েকমাস আগে, ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার পটমদা থানা এলাকায় তাঁদের গতিবিধির খবরও রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। এলাকাটির দূরত্ব বান্দোয়ান থেকে কম-বেশি ৪০ কিলোমিটার। এ ছাড়া, সচিন মান্ডি ও মদন মাহাতোর নেতৃত্বেও সরাইকেলা-খরসঁওয়া জেলার নিমডি ও লাগোয়া এলাকায় আরও একটি স্কোয়াড সক্রিয় রয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। এ এলাকাগুলিও বরাবাজার ও বলরামপুর থানা লাগোয়া।
গত জুনে বান্দোয়ানে দু’রাজ্যের সীমানা লাগোয়া থানাগুলির পুলিশ আধিকারিকদের একটি বৈঠক হয়। বৈঠক থেকে বর্তমানে সক্রিয় মাওবাদী স্কোয়াড সদস্যদের কাছে আত্মসমর্পণের বার্তা পাঠানো হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। যদিও তাতে এখনও সাড়া মেলেনি বলে দাবি।
এ দিন বাঁকুড়াতেও এক মহিলা-সহ ১১ জনকে বিশেষ হোমগার্ডের চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। এসপি ধৃতিমান সরকার বলেন, “এ দিন চাকরি পাওয়া সকলেই আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী। সকলকে ৪২ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তার পরে তাঁদের নিয়োগ করা হবে।”